■ক্রেতা আদালত
ক্রেতা আদালত এক বিশেষ ধরনের আদালত। দেওয়ানি ও ফৌজদারির মতন চিরাচরিত আদালতগুলি এমনকি হাল আমলের লোক আদালতের থেকেও এর প্রকৃতি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধরনের। ক্রেতা আদালতের অপর নাম ক্রেতা আদালতের সুরক্ষা আদালত।
আইনের ভাষায় ‘ক্রেতা’-কে বলা হয় ‘কনজিউমার’ উপভোক্তা। সাধারণভাবে যাঁরা হাট, বাজার, দোকান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির কাজ থেকে মূল্য দিয়ে কোনো জিনিস বা পরিসেবা ক্রয় করে থাকেন তাঁদের ক্রেতা বা কনজিউমার বলা হয়। এই ক্রেতা কোনো জিনিস বা পরিসেবা কিনতে গিয়ে প্রতারিত হলে আইনগত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারেন, তাকে বলা হয় ক্রেতা আদালত (Consumer Court) ।
▲ক্রেতা আদালতের উদ্দেশ্য
ক্রেতা আদালতের প্রধান উদ্দেশ্য হল ক্রেতাদের সুরক্ষা প্রদান। ক্রেতার স্বার্থ দেখাই তার মূল কাজ। প্রবঞ্চিত বা ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতার আভিযোগ বা নালিশের আইনম্মত সুষ্ঠ প্রতিকার বা নিষ্পত্তিবিধানই এর উদ্দেশ্য। দেশের ক্রেতা সাধারণের উপকার ও সুরক্ষার মহৎ উদ্দেশেই গঠিত হয় ক্রেতা আদালত।
▲ক্রেতা আদালতের গঠন
ক্রেতা আদালতের তিনটি স্তর রয়েছে। এগুলি হল-১) জেলা স্তরের ক্রেতা আদালত, ২) রাজ্য স্তরের ক্রেতা আদালত এবং জাতীয় স্তরেরে ক্রেতা আদালত। ক্রেতা সুরক্ষা আইনে অবশ্য এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে আদালতের প্ররিবর্তে ‘কনজিউমার ডিসপিউটস রিড্রেসাল এজেন্সিজ’ ক্রেতা বিরোধ নিষ্পত্তির এজেন্সি বলে অভিহিত করা হয়েছে।
১) জেলা ক্রেতা আদালতঃ সাধারণভাবে প্রতিটি জেলায় একটি করে জেলা ক্রেতা আদালত রয়েছে। অবশ্য রাজ্য সরকার প্রয়োজন মনে করলে একটি জেলায় একাধিক ক্রেতা আদালতও স্থাপন করতে পারে। ক্রেতা ৩ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়।
২) রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশনঃ রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন রাজ্য স্তরে কাজ করে। একজন সভাপতি ও অন্য দুজন সদস্য, মোট তিনজনকে নিয়ে রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন গঠিত হয়। হাইর্কোটের একজন কর্মরত বা অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি কমিশনের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন।
৩) জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশনঃ জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন জাতীয় স্তরে কাজ করে। জাতীয় কমিশন একজন সভাপতি ও চারজন সদস্যসহ মোট পাঁচজনকে নিয়ে গঠিত হয়। সুপ্রিমকোর্টের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশনের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। অন্য চারজন কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক এবং স্নাতক ডিগ্রীধারী হতে হবে।
▲ ক্রেতা আদালতের বৈশিষ্ট্যঃ
ক্রেতা আদালত প্রচলিত আদালতগুলির থেকে একেবারে ভিন্ন, ক্রেতা আদালতের কতকগুলি মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে-
১) শুধু ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষার জন্য গঠিতঃ ক্রেতা আদালত শুধুমাত্র ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষার জন্য গঠিত। এই আদালতে ক্রেতা বা উপভোক্তা ছাড়া অন্য কেউ এখানে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন না।
১৯৮৬ সালে যে আইনে ক্রেতা আদালতের জন্ম হয়, সেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এই আইনে শুধুমাত্র ক্রেতার সুরক্ষা, বিক্রেতার নয়।
২) তিনটি স্তরে বিন্যস্তঃ ক্রেতা আদালত তিনটি স্তরে বিন্যস্ত। শীর্ষে রয়েছে জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন, তাঁর পরবর্তী ধাপে রয়েছে রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন এবং সর্বনিম্নে রয়েছে জেলা ক্রেতা আদালত। এই আইনে ক্রেতা-বিবাদের নিষ্পত্তির জন্য গঠিত এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘এজেন্সি’ বলা হয়ে থাকে।
৩) শুধুমাত্র বাদী পক্ষ বা অভিযোগকারীর নালিশঃ ক্রেতা আদালতের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট হল এখানে শুধুমাত্র বাদী পক্ষ বা ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে নালিশ গ্রহণ করা হয়। অন্যান্য আদালতে বাদী ও বিবাদী দু-পক্ষেরই নালিশ বা অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
৪) শুধু জিনিস নয়, পরিসেবাও অন্তর্ভক্তঃ ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ক্রেতাদের ক্রয় করা জিনিস নিয়ে বিরোধ নিষ্পিত্তির সাথে ক্রেতারা অর্থের বিনিময়ে যে সমস্ত পরিসেবা গ্রহণ করেন তাও অন্তভুক্ত থাকে।
৫) স্বল্প ব্যয়ে নালিশ জানানোর সহজ পদ্ধতিঃ ক্রেতা আদালতে ক্রেতারা অত্যন্ত অল্প খরচে সহজ সরল পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের নালিশ বা অভিযোগে জানাতে পারেন।
৬) আইনজীবীর প্রয়োজন নেইঃ ক্রেতা আদালতের নালিশ রুজু করার জন্য বা অভিযোগ পত্র দায়ের করার জন্য কোনো আইনজীবীর প্রয়োজন নেই। ক্রেতা সুরক্ষা রেগুলেশনে একথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, ক্রেতা আদালত আইনজীবী নিয়োগের জন্য পীড়াপীড়ি করবেন না।