logo CBCE Skill INDIA

Welcome to CBCE Skill INDIA. An ISO 9001:2015 Certified Autonomous Body | Best Quality Computer and Skills Training Provider Organization. Established Under Indian Trust Act 1882, Govt. of India. Identity No. - IV-190200628, and registered under NITI Aayog Govt. of India. Identity No. - WB/2023/0344555. Also registered under Ministry of Micro, Small & Medium Enterprises - MSME (Govt. of India). Registration Number - UDYAM-WB-06-0031863

মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজনৈতিক জীবন


মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালের প্রধান ঘটনাবলি

মহম্মদ বিন তুঘলক কে পাগলা রাজা বলা হয় কেন?

 

সূচনাঃ-

ভারতবর্ষের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ইতিহাসে বিদগ্ধ সম্রাট মহম্মদ বিন তুঘলকের গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁর চরিত্র সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ বিভিন্ন অভিমত পোষণ করেছেন। সমসাময়িক ঐতিহাসিকদ্বয় বারণী ও ইবনবতুতা তাঁর চরিত্র সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী অভিমত প্রকাশ করেছেন। বারণী মহম্মদ বিন তুঘলককে রক্ত পিপাসু ও নিষ্ঠুর বলে চিহ্নিত করেছেন। ইবনবক্তৃতা তাঁর প্রতি এরূপ কোন অভিযোগ করেননি। বরং তিনি তাঁকে সত্যনিষ্ঠ উদার বিনয়ী প্রকৃতির নরপতি বলে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে এ্যালফিনস্টোন, স্মিথ, হ্যাভেল, এডওয়ার্ড, খমাস প্রমূখ আধুনিক ইংরাজ ঐতিহাসিকগণ তাঁকে 'উন্মাদ' ও 'বিকৃত মস্তিষ্ক' বলে চিহ্নিত করেছেন। পক্ষান্তরে গার্ডনার ব্রাউনের বর্ণনায় সুলতানের 'বিকৃত মস্তিষ্কা ও রক্ত পিপাসুর অভিযোগ পাওয়া যায় না'।

         সুলতানের প্রাসাদের সম্মুখে সর্বদাই মৃতদেহ দেখা যাইত' – বারণী ও ইবনবতুতার এইরূপ বিবরণের উপর ভিত্তি করেই এ্যালফিনস্টোন প্রমুখ আধুনিক ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ মহম্মদ বিন তুঘলককে রক্ত পিপাসু বলে প্রতিপন্ন করবার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। একথা সত্য যে, মহম্মদ বিন তুঘলক কখনো কখনো সামান্য অপরাধেও অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দিতেন এবং এর কারণ হল এরূপ যে, মহম্মদ বিন তুঘলক কখনোই অপরাধের তারতম্য বিচার করতে পারতেন না। তাছাড়া মধ্যযুগের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিশেষতঃ  ইউরোপ ও এশিয়ায় প্রাণদণ্ড অতি সাধারণ দত্ত হিসাবেই বিবেচিত হত। কিন্তু এই ঘটনার সূত্র ধরে মহম্মদ বিন তুঘলককে রক্ত পিপাসু' সুলতান হিসাবে সুচিহ্নিত করা যুক্তি-সংগত নয়।

         মহম্মদ বিন তুঘলকের বিরুদ্ধে অপর একটি গুরুতর অভিযোগ হল এই যে, তিনি ছিলেন জয়াশ্রয়ী সুলতান। একথা অনস্বীকার্য যে, তিনি ছিলেন খামখেয়ালি ও নতুনত্বের প্রতীক। কিন্তু বৈপরীত্যমূলক মানসদৃষ্টিভঙ্গীতেও তিনি যে সমস্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন, সেগুলির মধ্যে সৃজনশীল প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর এই মানস প্রত্যয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত হল, রাজস্ব ও মুদ্রানীতি সংক্রান্ত সংস্কার। তবে তাঁর অস্থিরচিত্ততাহেত্ব ও পরিকল্পনাগুলি যুগোপযোগী ছিল না বলেই সেগুলি বিফলতায় পর্যবসিত হয়। সুলতানের চরিত্রে স্বভাবতই কতকগুলি পরস্পরবিরোধী একথা স্বীকার্য যে, গুণের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা গিয়েছিল।

        এদিকে লক্ষ্যরেখে আধুনিক ভারতীয় ঐতিহাসিক ঈশ্বরীপ্রসাদ তাঁকে, "Amazing compound of contradiction" বলে অভিহিত করেছেন। ডঃ মেহিদী হুসেনের মতে 'মহম্মদ বিন তুঘলকের মধ্যে পরস্পরবিরোধী গুণের সংমিশ্রণ ছিল বটে, কিন্তু তার পশ্চাতে কারণও ছিল। 'ডঃ হুসেনের এই মন্তব্য যথার্থ নয়। বস্তুত সুলতানের পরস্পরবিরোধী গুণাবলীর পশ্চাতে কারণ কিছু ছিল একথা বলা যায় না। মূলতঃ এইসব দিকগুলিই ছিল তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। কখনো তিনি ছিলেন বিনয়ী, আবার কখনো ছিলেন হিংস্র প্রকৃতির; কখনো মুক্ত হস্তে দান করতেন, আবার কখনো চরম সংকীর্ণতার পরিচয় দিতেন; কখনো সাধারণ নাগরিকের ন্যায় বিচারালয়ে কাজীর বিচার অবনত মস্তকে গ্রহণ করতেন, আবার কখনো বা সাধারণ অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি প্রদান করতেন। তাঁর চরিত্র সম্পর্কে ইবনবতুতা যা বিবরণ দিয়েছেন, তার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় সর্বাতিশয়ী।

 

 কৃতিত্ব বিচার:-

একথা অস্বীকার করবার উপায় নেই যে, ভারতবর্ষের ঘূর্ণাবর্ত রাজনৈতিক অবস্থায় অবস্থান করেও এই চিত্ত-বিভ্রাট সুলতানটি যে কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন, তা আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছে। বিদ্যা, মানসিক উৎকর্ষ ও প্রতিভার দিক থেকে বিচার করলে তাঁকে মধ্যযুগের ভারতীয় নৃপতিবর্গের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুলতান বলে চিহ্নিত করলেও অত্যুক্তি করা হবে না। তাঁর পাণ্ডিত্য ও মেধা সর্বজনবিদিত ছিল। একাধারে তিনি ছিলেন দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, কবি ও গণিতশাস্ত্রবিদ। তাছাড়া ধর্মশাস্ত্র, তর্কন্যায়শাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা এবং ফার্সী ভাষায় তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। তাঁর ভাষাতত্ত সম্পর্কেও যথেষ্ট জ্ঞান ছিল এবং তাঁর হস্তাক্ষরও ছিল অতি চমৎকার। তাঁর পাণ্ডিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বারণীর ন্যায় সুলতানবিরোধী লেখকও তাঁর শিল্পানুরাগ এবং বহুমুখী পান্ডিত্যের প্রশংসা করেছিলেন। 

      বারণী মনে করেন, মহম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন পণ্ডিত অ্যারিস্টটল-এর সমকক্ষ। মহম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন দয়ালু সুলতান। সমকালীন প্রজা এবং দারিদ্রা- পীড়িত মানুষদের দুর্দিনে তিনি মুক্ত হস্তে দান করতেন এবং প্রজার সহসা অশ্রু বিসর্জন অবলোকন করে তিনি নীরবে নিভৃতে আপন অশ্রু বিসর্জন করতেন। বারণী ও ইবনবক্তৃতা তাঁর দানশীলতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মহম্মদ বিন তুঘলক সুলতান হিসাবে বিভিন্ন গুণের পরিচয় দিলেও প্রশাসক হিসাবে তিনি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর এই ব্যর্থতার প্রতি লক্ষ রেখে ঐতিহাসিক লেনপুল বলেছেন, "With the best of intentions and no sense of Proportions Mahammad Tughlag was a tramsendand faiture.

 

মূল্যায়ন:-

প্রকৃতপক্ষে বলতে গেলে তাঁর সুদীর্ঘ ২৬ বৎসরের রাজত্বকালই ছিল ব্যর্থতায় পরিপূর্ণ। দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি, দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তকরণ, খোরাসন জয়ের পরিকল্পনা, তামার নোট প্রচলন প্রভৃতি ব্যাপারে প্রশাসনের অকর্মণ্যতা ও তাঁর রাজনৈতিক অদূরদর্শীতার পরিচয় পাওয়া যায়। মোঙ্গলদের অভূতপূর্ব অর্থ প্রদান করে তাঁদের নিরস্ত্র করার পশ্চাতে সুলতানের দুর্বলতার পরিচয় পাওয়া যায়। একথা অনস্বীকার্য যে, দিল্লী থেকে রাজধানী স্থানান্তরিত করার ফলেই মোঙ্গলগণ দিল্লী আক্রমণ করতে উৎসাহিত হয়েছিলেন।

-ধন্যবাদ

Popular Post:

Give us your feedback!

Your email address will not be published. Required fields are marked *
0 Comments Write Comment