সাধারণভাবে শরীর সম্পর্কীয় শিক্ষাই শারীরিক শিক্ষা। তবে যে শিক্ষার দ্বারা শরীরের বিভিন্ন দি- যেমন এর সুষম বৃদ্ধি, উন্নতি ও সংরক্ষণ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা যায় এবং সামাজিকতা, শৃঙ্খলাবোধ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা ইত্যাদি গুণাবলি অর্জন করা যায়, তাই শারীরিক শিক্ষা। শারীরিক শিক্ষা ছাড়া সাধারণ শিক্ষা অসম্পূর্ণ থাকে অর্থাৎ শারীরিক শিক্ষা সাধারণ শিক্ষার পরিপূরক। খেলাধুলা ও শরীর চর্চার মাধ্যমে উল্লিখিত দৈহিক ও মানসিক গুণাবলি লাভ করতে পারলে সেটা হবে শারীরিক শিক্ষার ফল বা অবদান।
ব্যস্তময় জীবনে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই মন মেজাজ এবং শরীর সতেজ রাখতে একমাত্র উত্তম বিকল্প শারীরিক শিক্ষা। তাই আজকের নিবন্ধে শারীরিক শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করব। এখানে শারীরিক শিক্ষা কি এবং তার গুরুত্ব, মূল্য এবং সুবিধা সম্পর্কে বলবো।
শৈশব থেকে আমাদের দেহ ও মনকে সুস্থ রাখার জন্য যে শিক্ষা দেওয়া হয় তাকে শারীরিক শিক্ষা বলা হয়। শারীরিক শিক্ষা বলতে খেলাধুলো, যোগা, ওয়ার্কআউট, প্রাণায়াম এবং ধ্যানের মতো ক্রিয়াকালাপকে বোঝায়। জীবনে যেমন প্রতিটি শিক্ষার গুরুত্ব রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে শারীরিক শিক্ষা। শারীরিক শিক্ষা দেহ ফিট এবং সুস্থ রাখে। শৈশব কাল থেকেই এই শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
আপনারা হয়তো জানেন আমাদের এই সুন্দর শরীর ভগবানের দেওয়া একটি খুব সুন্দর উপহার। তাই আমাদেরও তো উচিত এই সৌন্দর্যতা বজায় রাখা। এটি সুরক্ষিত করা আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। আর শরীর সুস্থ রাখতে গেলে আমরা যেই ক্রিয়াটি করি তা হল শারীরিক শিক্ষা।
তবে আজকাল ব্যস্তময় জীবনে মানুষ সারাদিন দৌড় ঝাপ করে যায়। অর্থ উপার্জনের তাগিদে মানুষ নিজেকে ভালো রাখতেই ভুলে যাচ্ছে। অর্থ যেমন আমাদের জীবনের একটি অঙ্গ, একইভাবে আমাদের শরীর কিন্তু আমাদের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই তার প্রতি অমনোযোগী হওয়া উচিত নয়।
একটু খেয়াল করে দেখুন আমরা শৈশবে পড়েছি এবং লিখেছি স্বাস্থ্যই সম্পদ। আমাদের শরীর যদি স্বাস্থ্যবান না হয় তবে আমরা কোনও ক্ষেত্রে সাফল্যের উচ্চতায় পৌঁছতে পারি না। শারীরিক শিক্ষা মানসিক শক্তি বিকাশ করে, সৌন্দর্য উন্নত করে এবং রোগগুলি প্রতিরোধ করে।
আমরা যদি শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব না বুঝি অথবা এই সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকে তাহলে আমরা দেহের সঠিক যত্ন নিতে পারব না। যার কারণে শরীর সুস্থ থাকতে সক্ষম হবে না।
বয়স বাড়ার সঙ্গে হজম শক্তির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধী শক্তি হ্রাস শুরু হয়। এবং বিভিন্ন ধরণের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের শারীরিক অনুশীলন এবং যোগব্যায়াম করা উচিত। তাই শারীরিক শিক্ষা শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক শিক্ষা একটি শক্তিশালী শরীর এবং একটি শান্ত মন তৈরি করতে পারে। এখন প্রতিটি দেশে শৈশব সময় থেকেই যোগ এবং প্রাণায়াম গ্রহণ করেছে।
স্কুল জীবন থেকেই স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক শিক্ষা গুরুত্ব বোঝানো হয় এবং শারীরিক শিক্ষা শেখানো হয়। কারণ এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেয়। ছাত্রজীবনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্বগুলি হল-
1. অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উন্নতিঃ-
নিয়মিত সঠিকভাবে অঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের ও ক্রিয়া পদ্ধতির উন্নতি হয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।
বিভিন্ন খেলাধুলা, দৌড়, লাফ, নিক্ষেপ প্রভৃতি কর্মকান্ড অঙ্গ সঞ্চালনক্রিয়ার সহায়তা করে।এতে মনে যেরূপ আনন্দ আসে সেরূপ শরীরের যথেষ্ট ব্যায়াম হয়।
তাই শিশু ও কিশেঅরদের জন্য খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষা খুব প্রয়োজন।
2. স্নায়ু মাংসপেশির সমন্বয়ঃ-
শৈশবে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দ্রূত বেড়ে ওঠে। শরীর বৃদ্ধি পেলেও অনেক সময় তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে মানসিক বিকাশ সাধন হয় নাম ফলে স্নায়ু ও মাংসপেশির সাথে স্নায়ুর সমন্নয় ঘটে না। এগুলো যথাযাথভাবে কাজ করার জন্য সঠিক অঙ্গ সঞ্চালন ও খেলাধুলার প্রয়োজন।
3. পাঠের একঘেয়েমী দূরঃ-
শ্রেণীকক্ষে একটানা লেখাপড়ায় রত থাকলে পাঠে একঘেয়েমী আসে। লেখাপড়ার সাথে নিয়মিত কিছুক্ষণ খেলাধুলা থাকলে তাতে শ্রেণীকক্ষে পাঠের একঘেয়েমী দূর এবং মনে সজীবতা ফিরে আসে ও পড়াশুনার মন বসে।
4. সামাজিক গুণাবলি অর্জনঃ-
দলের সদস্য হয়ে, একসাথে খেলে, আইন মেনে চলে, শিক্ষক বা নেতার নির্দেশ পালন করে, নেতৃত্ব দিয়ে বা হার-জিতে মেজাজ ঠিক রেখে ছেলে মেয়েরা দলীয় একতা ও শৃঙ্খলাবোধ বজায় রাখতে, আইন অনুসরণ করতে, আবেগ নিয়ন্ত্রণে অভ্যস্ত হতে এবং অন্যান্য সামাজিক গুণাবলি অর্জন করতে শিখে। তাই এ সকল চারিত্রিক গুণাবলি অর্জনের জন্য শারীরিক শিক্ষার দরকার।
5। পারস্পরিক বোঝাপড়া, বিশ্লেষণ ও বিচার ক্ষমতার বিকাশ ও উন্নতি সাধনঃ-
ছেলে মেয়েরা খেলাধুলার অংশ নিয়ে ক্রমান্বয়ে আইন-কানুন জানতে এবং বিভিন্ন কলাকৌশল বিশ্লেষণ করে তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারে। তাছাড়া কোনটা ন্যায় ও কোনটা অন্যায় তা যাচাই করতে শিখে। তাই ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার সাথে সাথে চিন্তা ও বোধশক্তি বিকাশ ও উন্নয়ন এবং আদর্শ নাগরিক রূপে গড়ে ওঠার জন্য সাধারণ শিক্ষার সাথে শারীরিক শিক্ষার সমন্বয় থাকা বাঝ্ছনীয়।
এই শিক্ষা দেহ এবং মন উভয়ের জন্য একটি ভালো উৎস। স্কুলে বুদ্ধিদীপ্ত হওয়ার পরে, শিক্ষার্থীরা সাধারণত হতাশাগ্রস্থ বোধ করে, তারপরে বিকেলে বাইরের খেলাধুলো বাচ্চাদের তাজা বায়ু শ্বাস প্রশ্বাস এবং শক্তিশালী করে তোলে। এই ক্রীড়াগুলি শরীরের সমস্ত অঙ্গকে অবাধ শক্তি সরবরাহ করে। তাই তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
দৌড়ের যুগে যোগ ব্যায়াম করা কিছুটা কঠিন। তবে এটি প্রতিদিন করলে আপনি অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। আপনার অবশ্যই শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বাচ্চাদের বোঝাতে হবে।