প্রাচীন কালের পূর্ব ঐতিহ্যবাহী ধর্ম পরিচালনার প্রধান বৈশিষ্ট্য
প্রাচীন কালের পূর্ব ঐতিহ্যবাহী ধর্ম পরিচালনার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল অত্যন্ত গভীর এবং জটিল। এ ধর্মগুলো প্রাকৃতিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক জগতের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত ছিল। প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:
প্রকৃতি পূজা: প্রাচীন ধর্মগুলোতে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান যেমন সূর্য, চাঁদ, জল, বায়ু, অগ্নি, এবং পৃথিবী পূজিত হতো। এদেরকে দেবতা বা দেবীর প্রতীক হিসেবে মানা হতো এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও পূজা নিবেদন করা হতো।
আত্মা ও পূর্বপুরুষ পূজা: প্রাচীন মানুষেরা বিশ্বাস করত যে, মৃত্যুর পরে আত্মারা জীবিতদের উপর প্রভাব ফেলে। এজন্য তারা পূর্বপুরুষদের পূজা করত এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করত।
টোটেমিজম এবং অ্যানিমিজম: অনেক প্রাচীন সমাজে প্রাণী, উদ্ভিদ, পাথর, নদী ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে আত্মা বা জীবনীশক্তির উপস্থিতি বিশ্বাস করা হতো। টোটেমিজম হল নির্দিষ্ট প্রাণী বা প্রাকৃতিক উপাদানের প্রতি গোষ্ঠীভিত্তিক শ্রদ্ধা ও পূজা।
বহুদেবতাবাদ: প্রাচীন ধর্মগুলোতে বহু দেব-দেবীর পূজা করা হতো, যেখানে প্রতিটি দেবতার একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা বা ক্ষমতা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ফসলের দেবতা, যুদ্ধের দেবতা, প্রেমের দেবী ইত্যাদি।
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান: প্রাচীন ধর্মগুলোর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব। এ ধরনের আচার-অনুষ্ঠানগুলো প্রায়ই প্রাকৃতিক ঘটনা, ঋতুচক্র, জন্ম, মৃত্যু, এবং ফসল কাটার সময় পালন করা হতো।
যাজকতন্ত্র এবং ধর্মগুরু: প্রাচীন সমাজে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য বিশেষায়িত যাজক বা ধর্মগুরু থাকত। এরা সমাজের মধ্যে বিশেষ মর্যাদা পেত এবং ধর্মীয় কাজ পরিচালনা করত।
পবিত্র স্থান এবং মন্দির: প্রাচীন ধর্মগুলোতে পবিত্র স্থান এবং মন্দির ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এখানে দেব-দেবীর মূর্তি স্থাপন করা হতো এবং নিয়মিত পূজা-অর্চনা করা হতো।
যজ্ঞ এবং বলিদান: প্রাচীন ধর্মীয় প্রথাগুলোর মধ্যে যজ্ঞ এবং বলিদান ছিল একটি সাধারণ অনুশীলন। দেবতাদের খুশি করার জন্য পশু বলি, খাদ্য, ফুল ইত্যাদি নিবেদন করা হতো।
মন্ত্র এবং জপ: প্রাচীন ধর্মে বিভিন্ন মন্ত্র এবং জপ করা হতো, যা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মন্ত্রগুলো ছিল সাধারণত দেবতাদের স্তব এবং প্রার্থনার জন্য ব্যবহৃত।
মৃত্যু এবং পরজন্ম বিশ্বাস: প্রাচীন ধর্মগুলোতে মৃত্যু এবং পরজন্ম সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা ছিল। অনেক ধর্ম বিশ্বাস করত যে মৃত্যু শুধুমাত্র এক জীবন থেকে আরেক জীবনে পরিবর্তনের একটি ধাপ।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাচীন কালের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং বিশ্বাস ব্যবস্থার মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত ছিল এবং সমাজের বিভিন্ন দিক পরিচালনা করত।
-ধন্যবাদ