আলবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন একজন বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী। আলবার্ট আইনস্টাইন আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং ভর-শক্তি বিখ্যাত সমীকরণ সূত্র E = mc2 আবিষ্কারের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত।
বিশ্বখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein Jivani) জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আলবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন জার্মানিতে জন্মগ্রহণকারী একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী। আলবার্ট আইনস্টাইন মূলত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব (আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের দুটি স্তম্ভের একটি) এবং ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র, E = mc2 ( যা “বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত সমীকরণ” হিসেবে খেতাব দেওয়া হয়েছে ) আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত।
১৮৭৯ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ ই মার্চ জার্মানীর ব্যাভরিয়া অঞ্চলের ছােট একটি শহর উলমে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ।
সকালটা দেখেই বােঝা যায় সারাটা দিন কেমন , যাবে ‘ — এই প্রবাদ বাক্যের অযথার্থতা প্রমাণিত হয়ে যায় এই মনীষীর জীবনী পর্যালােচনা করলে । কারণ ছােটবেলা থেকে তিনি পরবর্তীকালে কোনােভাবেই বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীহবার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হননি । বরং ছােটবেলায় তিনি হাবাগােবা ধরনের এবং তােতলা ছিলেন । বাবা ছেলেকে নিয়ে হতাশ হলেও মা আশা করতেন ছেলে একদিন অধ্যাপক হবে ।
আলবার্ট আইনস্টাইনের বাবা হার্মান আইনস্টাইনের একটা ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতির দোকান ছিলাে । মা পলিন কোচ খুব ভালাে পিয়ানাে বাজাতে পারতেন । আইনস্টাইন মায়ের কাছে বেহালা বাজানাে শেখেন । পরবর্তীকালে তিনি যে তিনটি বিষয়ে যথার্থবুৎপত্তি অর্জন করেন , যথা অংক , পদার্থবিদ্যা এবং বেহালা বাজানাে , তার মধ্যে বেহালা বাজানাে শেখার জন্য মায়ের কাছে ঋণী ।
ছােটবেলা থেকেই আলবার্ট আইনস্টাইন এমন সব বই পড়তেন , যেগুলি পড়লে চিন্তা করতে হয় । চিন্তাশক্তি বাড়ে । মাত্র তেরাে বছর বয়সেই তিনি কান্টের দর্শনের বইগুলাে সব পড়ে ফেলেন । তবে স্কুলে ভালাে ছাত্র হিসাবে তার তেমন সুনাম ছিলাে না ।
১৯০০ সালে তিনি সুইস নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন । ১৯০১ সালে চাকরি যােগাড় করার আগে তিনি মিলেভা নামে এক সহপাঠিনী মেয়েকে বিয়ে করেন । ১৯০২ সালে তিনি সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরের পেটেন্ট অফিসে একটা কেরানির চাকরি পান । তিনি বিজ্ঞানচর্চায় মনােনিবেশ করার সুযােগ পেলেন ।
তিনি পদার্থবিদ্যায় তার গবেষণালব্ধ ফলাফল সমৃদ্ধ তিনটি মৌলিক প্রবন্ধ পাঠালেন । বার্লিনের একটা বিখ্যাত পত্রিকায় । সেগুলাে একে একে পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সারা ইউরােপে আলােড়ন সৃষ্টি করে । ওখানকার অনেক পদার্থবিজ্ঞানীকেই অনন্যসাধারণ এক তত্ব দিলেন আলাের গতি সম্বন্ধে । তিনি বললেন , আলাের গতি অপরিবর্তনীয় এবং ধ্রুব । প্রতি সেকেন্ডে গতি ১,৮৬,০০০ মাইল । এই তত্ব থেকেই পরবর্তীতে আইনস্টাইন পদার্থের শক্তিতে রূপান্তর সম্পর্কিত তার বিখ্যাত সূত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হন ।
১৯১২ সালে আইনস্টাইন সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অধ্যাপক পদে যােগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পান । ১৯১৩ সালে বার্লিনের অধ্যাপকহয়ে তিনি সেখানে যেতে চাইলেন , কিন্তু স্ত্রী মেলেভা জুরিখ ছেড়ে যেতে চাইলেন না । তখন তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলাে । দুই পুত্রসন্তান আলবার্ট এবং এডওয়ার্ডকেজুরিখে রেখে আইনস্টাইন বার্লিনে গেলেন । এরপর ১৯১৭ সালে তিনি তার খুড়তুতাে বােন এলসাকে বিয়ে করেন । এলসা বিধবা ছিলেন তিনি ১৯৩৬ সালে । আমৃত্যু পর্যন্ত আপনভােলা স্বামীকে সংসার জীবনে সুখি রাখার আপ্রান চেষ্টা করে গেছেন ।
১৯২১ সালে ফোটনতত্ত্বের ভিত্তিতে আলােক -তড়িৎ ক্রিয়ার ব্যাখ্যা দানের জন্য তাকে পদার্থবিদ্যায় নােবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ।
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হলাে । তিনি শুনতে পেলেন জার্মানী আণবিক বােমা তৈরির গবেষণা চালাচ্ছে । বিশ্ববাসীর শান্তির জন্য তিনি তার বিখ্যাত তত্ত্বের সাহায্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে পারমাণবিক বােমা তৈরির পরামর্শ দিলেন । পরবর্তীকালে জাপানের হিরােশিমা – নাগাসাকিতে পারমাণবিক বােমা নিক্ষিপ্ত হলে তার ভয়াবহতা উপলব্ধি করে আইনস্টাইন পাপবােধে আক্রান্ত হন । আজীবন তিনি এই পাপবােধে আত্মগ্লানি ভােগ করে গেছেন ।
১৯৫৫ সালের ১৮ ই এপ্রিল এই বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী ৭৬ বছর । বসে পরলােক গমন করেন ।