ব্যাটারি:
- একাধিক বৈদ্যুতিক কোষের বা সেলের সমষ্টি কে ব্যাটারি বলে। যার রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সার্কিটে ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়। সমস্ত ব্যাটারি দুটি মৌলিক উপাদান নিয়ে গঠিত: ১) ইলেক্ট্রোড (Electrode) ও ২) ইলেক্ট্রোলাইট (Electrolyte) [ব্যাটারি কী ভাবে কাজ করে এ বিষয়ে জানার আগে আমরা বৈদ্যুতিক সেল (Electric cell), ইলেক্ট্রোলাইট (Electrolyte) ও ইলেক্ট্রোড (Electrode) সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেবো।
বৈদ্যুতিক সেল-এর প্রকার :
- প্রাইমারি সেল
- সেকেন্ডারি সেল
প্রাইমারি সেল:
- যে সেল একবার ব্যবহার করার পর আর দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যায় না তাকে প্রাইমারি সেল বলে। অর্থাৎ এই সেল রিচার্জ করা যায় না। টর্চ লাইটের ব্যাটারী ক্যামেরা, টিভি রিমোট এইগুলি সব প্রাইমারি সেলের উদাহরণ । প্রাথমিক সেল এর রাসায়নিক পদার্থের রাসায়নিক শক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হয়। তার ফলে আমাদের ব্যাটারির সেলটি বার বার পরিবর্তন করতে হয়। আর আমরা যদি এই রকম সেলকে পুনরায় কাজ করাতে চাই তাহলে আমাদের ওই সেল এর ভেতর রাসায়নিক পদার্থ যোগ করতে হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে আমরা এটিকে পুনরায় চার্জ করতে পারি না।
সেকেন্ডারি সেল:
- যে সেল একবার ব্যবহার করার পর আবার চার্জ করে ব্যবহার করা যায় তাকে সেকেন্ডারি সেল বলে। যেমন বাস, ট্রাক, বাড়ির ইনভাটারে আমরা এই সেলের ব্যবহার করে থাকি। সেকেন্ডারি সেল এর কোষ বৈদ্যুতিক শক্তি কে রাসায়নিক শক্তিতে সংরক্ষণ করে এবং পরে ওই রাসায়নিক শক্তি কে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করে।
- সেকেন্ডারি সেলের দাম সবসময় বেশি হয় যদি আমি মার্কেটে ৩.৭ ভোল্ট এর প্রাইমারি সেল কিনি তাহলে সেটা আমরা ১০ টাকা তে পেয়ে যাই কিন্তু যখন আমরা ওই একই ভোল্ট এর একটি সেকেন্ডারি সেল কিনি তাহলে তার দাম প্রাইমারি সেলের থেকে অনেক গুন বেশি হয়।
ইলেক্ট্রোলাইট (Electrolyte):
- ইলেকট্রোলাইট এক প্রকার (জল যুক্ত) রাসায়নিক পদার্থ যার ভিতর দিয়ে সহজে কারেন্ট প্রবাহিত(Flow) হতে পারে। যেমন- সালফিউরিক এসিড, নাইট্রিক এসিড ইত্যাদি।
ইলেক্ট্রোড (Electrode):
- যে পরিবাহীর ভেতর দিয়ে ইলেকট্রোলাইটের (Electrolyte) মধ্যে কারেন্ট খুব সহজেই প্রবেশ করতে পারে এবং কারেন্ট বাইরে আসতে পারে তাকে ইলেকট্রোড বলে । ইলেকট্রোড দুই প্রকার :- পজেটিভ পরিবাহীর মধ্য দিযইয়ে ইলেকট্রোলাইট হইতে কারেন্ট বাহির হইয়া আসে তাকে পজেটিভ ইলেকট্রোড বলে। যেমন – তামা, রূপা, কার্বন ইত্যাদি । নেগেটিভ ইলেকট্রোড(anode)(-): যে পরিবাহীর মধ্য দিয়া ইলেকট্রোলাইটে কারেন্ট প্রবেশ করিতে পারে তাকে নেগেটিভ ইলেকট্রোড(anode) (-) বলে। যেমন দস্তা, সীসা, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি ।
ব্যাটারি কী ভাবে কাজ করে:
- যখন ব্যাটারি পজেটিভ ইলেকট্রোড (cathode) (+) আর নেগেটিভ ইলেকট্রোড (anode)(-) কে কোনো সার্কিট এর সাথে জোড়া হয় তখন ব্যাটারির মধ্যে এনোড (-) আর ইলেক্ট্রোলাইট-এর Chemical reaction শুরু হয়। এই reaction আর ফলে সার্কিট এর মধ্যে ইলেক্ট্রন প্রবাহ শুরু হয়ে যায় ।
- সেই ইলেক্ট্রন (electron) গুन প্রবাহিত হয়ে ক্যাথোড এ যায় যেখানে আর একটি Chemical reaction শুরু হয়। এই ভাবেই ইলেক্ট্রন (electron) প্রবাহিত হতে থাকে। যখন এনোড আর ক্যাথোড এর মধ্যে থাকা ইলেক্ট্রোলাইট (Electrolyte) শেষ হয় যায় তখন আর Chemical reaction করতে পারে না।যার ফলে ইলেক্ট্রন (electron) প্রবাহিত হতে পারেনা। তখন আমরা তখন ওই ব্যাটারি টিকে খারাপ ব্যাটারি বলে থাকি।
ব্যাটারির ইতিহাস:
- ১৭৯৯ সালে ইটালিয়ান বিজ্ঞানী আলেসান্দ্রো ভোল্টা (Alessandro Volta) প্রথম ব্যাটারি খোঁজ করেন। যেটাকে উনি বল্টিক পাইল (voltaic pile) নাম দেন। বল্টিক পাইলে তামা আর জিঙ্ক এর জোড় ব্যবহার করা হতো। তামা আর জিঙ্ক এর প্লেট কে একের পর এক রেখে (একটির উপর আর একটি) ওয়াইনে (যেটা এখানে ইলেক্ট্রোলাইট এর কাজ করে) ভেজানো কাপড় বা কাঠ বোর্ড এর মাধ্যমে দুটি প্লেট কে আলাদা করা হয়। বল্টিক পাইল (voltaic pile) সর্বপ্রথম নিরন্তর বিদ্যুৎ এবং স্থির প্রবাহ উৎপন্ন করেছিলেন। উনি আরো বেশি ভোল্টেজ উৎপন্ন করার জন্য বিভিন্ন ধরণের ধাতুর ব্যবহার করেছিলেন যার মধ্যে রুপো আর দত্তা দিয়ে সবথেকে বসে সফল হয়েছিলেন।
ব্যাটরির প্রকার:
ব্যাটারি দুই প্রকার-এর হয়:
- প্রাইমারি ব্যাটারি (Primary Battery)
- সেকেন্ডারি ব্যাটারি (Secondary Battery)
প্রাইমারি ব্যাটারি (Primary Battery):
- প্রাইমারি ব্যাটারি এমন একটি ব্যাটারি যেটি এক বার ব্যবহার হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় রিচার্জ করা যায় না। প্রাইমারি ব্যাটারি ইলেক্ট্রো কেমিক্যাল সেল দিয়ে তৈরি হয়। প্রাইমারি ব্যাটারি অনেক রকমের পাওয়া যায় যেমন হাত ঘড়ির ব্যাটারি টিভি রিমোট-এর ব্যাটারি এই ব্যাটারি গুলি মূলত সেই এপ্লিকেশন এ ব্যবহার হয় যেখানে চার্জিং করা অসম্ভব। প্রাইমারি ব্যাটারিতে কিছু নির্দিষ্ট শক্তি থাকে এবং ডিভাইস গুলিতে এই ব্যাটারি এমন ভাবে ডিসাইন করা হয় যেটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চলতে পারে। এই ব্যাটারি এর কিছু উদাহরণ :- রিমোট কন্ট্রোল হাত ঘড়ি বাচ্চাদের খেলনা ইত্যাদি।
সেকেন্ডারি ব্যাটারি (Secondary Battery):
- এটি এমন একটি ব্যাটারি যেটাতে ইলেক্ট্রো কেমিক্যাল সেল থাকে এবং তাদের দ্বারা চালিত রাসায়নিক বিক্রিয়াটি সামান্য ভোল্টেজ এর মাধ্যমে রিসোর্সে হতে পারে যার কারণে এটিকে রিচার্জেবল ব্যাটারি বলে। সেকেন্ডারি ব্যাটারি সেই সব ডিভাইস গুলিতে ব্যবহার করা হয় যেখানে প্রাইমারি ব্যাটারি ব্যবহার করা খুব ব্যায়বহুল বা অযোক্তিক। কম ক্ষমতার সেকেন্ডারি ব্যাটারি আমরা আমাদের স্মার্ট ফোনে এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস এ ব্যাবহার করে থাকি। আবার বেশি ক্ষমতার সেকেন্ডারি ব্যাটারি যানবাহন এ ব্যবহার করা হয়।
- বাড়ির ইনভার্টার এর সাথে যুক্ত করে আমরা বিদ্যুৎ সাপ্লাই ও করে থাকি রিচার্জেবল ব্যাটারি তৈরি করতে প্রাইমারি ব্যাটারির থাকে অনেক বেশি খরচ হয়। সেকেন্ডারি ব্যাটারি কে রসায়নের ভিত্তে তে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে হয়েছে। এটি বেশ গুরুত্ব পূর্ণ কারণ ব্যাটারির রসায়নের কারণেই। ব্যাটারির কিছু বৈশিষ্ট যেমন-দাম শক্তি জীবন চক্র, ইত্যাদি প্রকাশিত হয়।
সেকেন্ডারি ব্যাটারি মূলত চার ভাগে বিভক্ত
- লিথিয়াম-আয়ন (লি-আয়ন)
- নিকেল ক্যাডমিয়াম (নি-সিডি)
- নিকেল-ধাতব হাইড্রাইড (Ni-MH)
- লেড এসিড