আদিম কালের মানব সমাজের জীবনযাত্রা
আদিম কালের মানব সমাজের জীবনযাত্রা ছিল অত্যন্ত প্রাথমিক এবং প্রাকৃতিক সম্পদনির্ভর। তাদের জীবনযাত্রার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ:
শিকার এবং সংগ্রহকারী: আদিম মানুষেরা মূলত শিকারি ও সংগ্রাহক ছিলেন। তারা বন্য পশু শিকার করতেন এবং বুনো ফল, শাকসবজি, মূল, বাদাম ইত্যাদি সংগ্রহ করতেন। তারা ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বাস করত, এবং খাদ্য সংগ্রহের জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াত।
বাসস্থান: আদিম মানুষরা গুহা বা প্রাকৃতিক আশ্রয়স্থলে বাস করত। পরবর্তীকালে, তারা পাতা, শাখা-প্রশাখা, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে অস্থায়ী আশ্রয় গড়ত।
অস্ত্র এবং সরঞ্জাম: প্রাথমিকভাবে তারা পাথর, কাঠ, এবং হাড় দিয়ে সরঞ্জাম তৈরি করত। পাথরের তৈরি হাতিয়ারগুলো শিকার ও খাদ্য প্রস্তুতির জন্য ব্যবহৃত হতো।
আগুনের ব্যবহার: আগুনের আবিষ্কার এবং ব্যবহারে তাদের জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। আগুন খাদ্য রান্না করা, শীত থেকে রক্ষা পাওয়া, এবং বন্য প্রাণীদের দূরে রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো।
সমাজ ব্যবস্থা: আদিম সমাজগুলো ছিল ছোট ছোট গোষ্ঠীভিত্তিক, যেখানে সবাই সমানভাবে সম্পদ ভাগাভাগি করত। কোনো বিশেষাধিকার বা সামাজিক স্তরবিন্যাস ছিল না।
পোশাক: আদিম মানুষরা পশুর চামড়া এবং গাছের ছাল দিয়ে পোশাক তৈরি করত, যা তাদেরকে আবহাওয়ার প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করত।
ভাষা এবং যোগাযোগ: আদিম মানুষেরা মৌখিক ভাষার মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করত। ধীরে ধীরে তারা প্রতীক এবং চিহ্ন ব্যবহার শুরু করে, যা ভাষার উন্নতির দিকে প্রথম পদক্ষেপ।
ধর্ম এবং আচার: আদিম মানুষেরা প্রকৃতিকে পূজা করত এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানকে দেবতা মনে করত। তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং বিশ্বাস ছিল প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর উপর নির্ভরশীল।
শিল্প এবং সংস্কৃতি: গুহাচিত্র এবং পাথরের খোদাই হলো আদিম মানুষেরা তাদের সংস্কৃতি এবং শিল্পের প্রথম নিদর্শন। এই চিত্রগুলো শিকার এবং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দৃশ্যের প্রতিফলন ঘটায়।
স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা: আদিম মানুষরা প্রাকৃতিক উপাদান যেমন গাছের ছাল, পাতার রস ইত্যাদি ব্যবহার করে রোগের চিকিৎসা করত। তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল খুবই প্রাথমিক এবং প্রায়ই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত।
এইভাবে, আদিম কালের মানব সমাজের জীবনযাত্রা ছিল প্রকৃতি নির্ভর এবং প্রাথমিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য সরাসরি প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল।
-ধন্যবাদ