ইন্দিরা গান্ধীর পিতা , রাজীব গান্ধীর পিতামহ পন্ডিত জওহরলাল নেহরু 1947 সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে 1964 সালে মৃত্যু পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ছিলেন । দীর্ঘ সতেরাে বছর জওহরলাল নেহেরু নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ভারত পরিচালনার মুখ্য দায়িত্বে ছিলেন । জওহরলাল নেহেরু মােট পাঁচবার ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন । ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে জওহরলাল নেহেরু নেতৃত্ব দেন ।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । জওহরলাল নেহেরু জীবনী বা জওহরলাল নেহেরু আত্মজীবনী বা জওহরলাল নেহেরু জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ।
জওহরলাল নেহেরু:
জওহরলাল নেহেরু ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, আদর্শবাদী, পণ্ডিত এবং কূটনীতিবিদ নেহেরু ছিলেন একজন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। লেখক হিসেবেও নেহেরু ছিলেন বিশিষ্ট। ইংরেজিতে লেখা জওহরলাল নেহেরু এর তিনটি বিখ্যাত বই- ‘একটি আত্মজীবনী‘, ‘বিশ্ব ইতিহাসের কিছু চিত্র‘, এবং ‘ভারত আবিষ্কার‘ চিরায়ত সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছে।
জওহরলাল নেহেরু এর জন্ম ও পিতামাতা:
প্রখ্যাত ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্ম এলাহাবাদে , 1889 খ্রিঃ 14ই নভেম্বর। তার পিতা মতিলাল নেহরু ,মাতা স্বরূপরানী।
মতিলাল নেহরু ছিলেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী। ভারতের রাজনীতিতেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে যােগ দেবার ফলে বহুবার তাকে কারাদণ্ড ভােগ করতে হয়েছিল।মতিলাল নিজে জাতীয়তা বােধে প্রাণিত হলেও তার পরিবারের পরিবেশ ছিল বিদেশানুগত।
জওহরলাল নেহেরু এর শৈশব:
এই আবহাওয়াতেই ধনীর বিলাস ও আদরের লালিত হয়েছিলেন। তার বাল্যের শিক্ষা লাভ হয়েছিল ইংরেজ টিউটরের কাছে ।
জওহরলাল নেহেরু এর কলেজ জীবন:
1905খ্রিঃ জওহরলালকে বিলেত পাঠানাে হল । সেখানে হ্যারােস্কুল, ট্রিনিটি কলেজ, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্বশেষে লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স – এ সর্বমােট সাত বছর অধ্যয়ন করেন।
জওহরলাল নেহেরু এর শিক্ষাজীবন:
রসায়ন , ভূতত্ত্ব , পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়তে পড়তে তিনি সহসা উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে পড়া আরম্ভ করেন । পরে লন্ডন থেকে 1922খ্রিঃ দেশে ফিরলেন ব্যারিষ্টার হয়ে।
জওহরলাল নেহেরু এর বিবাহজীবন:
এলাহাবাদে আইন ব্যবসায়ে কিছুকাল লিপ্ত থাকার সময়ে দিল্লির ময়দাকল মালিকের কন্যা কমলার সঙ্গে জওহরলালের বিবাহ হয়।
1917 খ্রিঃ তাদের কন্যা ইন্দিরার জন্ম হয়। 1925 খ্রিঃ এই দম্পতি এক পুত্রসন্তান লাভ করেন , কিন্তু দ্বিতীয় দিনেই তার মৃত্যু হয়।
জওহরলাল নেহেরু এর কর্মজীবন:
1922 সালে জওহরলাল নেহরু এলাহাবাদ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আইন ব্যবসা ছাড়াও পাশাপাশি তিনি পারিবারিক ঐতিহ্য। অনুযায়ী রাজনীতিতেও পরিপক্কতা অর্জন করতে থাকেন।
জওহরলাল নেহেরুর রাজনীতি জীবন:
1916 সালে বিয়ের পর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন । এবং তার রাজনৈতিক গুরু এবং পরবর্তীকালে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সংস্পর্শে আসেন । তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবসময় সর্বাবস্থায় গান্ধীজীর সঙ্গে সহযােগিতা করেন।
ব্রিটিশ সরকারের নীতির বিরােধিতা করায় এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দান করায় জওহরলাল নেহরু গান্ধীর মতাে বহুবার কারারুদ্ধ হন এবং সর্বমােট প্রায় 17 বছর জেল খাটেন । জেলে বসেই তিনি কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। যেগুলাে পরে বিখ্যাত হয়েছিলাে ।
জওহরলাল নেহেরু এর বই:
তিনি শুধু ভারতেই নয় , বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও পন্ডিত ও জ্ঞানী ব্যক্তি হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন । তার বইগুলাের মধ্যে আছে ‘ ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’, ‘গ্লিম্পসেস অব ওয়ার্লড হিস্ত্রী এবং অটোবায়ােগ্রাফী।
জওহরলাল নেহেরু কংগ্রেস দলের বিজয় প্রধান স্থাপক:
জওহরলাল নেহরুর সভাপতিত্বেই অনুষ্ঠিত এক সভায় 1929 সালে ভারতীয় কংগ্রেস দল স্বাধীনতার পক্ষে সর্বাত্মক রায় দেয় । 1937 সালে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক নির্বাচনে কংগ্রেস দলের বিজয়ের প্রধান স্থপক ছিলেন জওহরলাল নেহরু।
তিনি জেলে বসে নানা বিষয়ে কন্যা ইন্দিরা গান্ধিকে অনেক চিঠি লেখেন । সেগুলাে নিয়ে পরে একটা সংকলন – গ্রন্থও প্রকাশিত হয় । তার আত্মজীবনীর একটা অংশ স্কুলপাঠ্যও হয়েছিলাে নাম ছিলাে My childhood .
জওহরলাল নেহেরু দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী:
1947 সালের 15ই আগষ্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করলে জওহরলাল নেহরু প্রথম দেশের প্রধানমন্ত্রী মনােনীত হন । এরপর 1962 সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সল নির্বাচনেই তার সমর্থিতঙ্কংগ্রেস জওহরলাল নেহরু যদিও আজীবন রাজনীতিতে গান্ধীর শিষ্য সম্বল ভারে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকেন আজীবন ।
জওহরলাল নেহেরু যদিও আজীবন রাজনীতিতে গান্ধীর শিষ্য ছিলেন, কিন্তু ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় দু’জনের মধ্যে বেশ মতপার্থক্য ছিলাে । গান্ধী ছিলেন পল্লীনির্ভর অর্থনীতির পক্ষে , কিন্তু নেহরু পাশ্চাত্যের মতাে শিল্পে উন্নত করে আধুনিক ভারত গড়ার পক্ষপাতি ছিলেন । ভারত স্বাধীন হওয়ার কয়েকমাস । পরে মহাত্মা গান্ধী আততায়ীর হাতে নিহত হলে তাদের এই মতপার্থক্য জটিল রূপ নিতে পারেনি ।
জওহরলাল নেহেরু এর বিশ্বরাজনীতি:
বিশ্বরাজনীতিতে নেহরু সবসময় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে গেছেন । তিনি জোট নিরপেক্ষ রাজনীতির পক্ষ অবলম্বন করেন । ১৯৬১ সালে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কর্নেল নাসের, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ এবং যুগােশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোর সঙ্গে একযােগে কাজ করে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন গড়ে তােলেন । বাংলাদেশ জোটনিরপেক্ষ দেশসমূহের অন্তর্ভূক্ত।
14th November শিশুদিবস পালন:
জওহরলাল নেহরু শিশুদের খুব ভালােবাসতেন । এইজন্য তার । জন্মদিন 14th Novemberকে ভারতে ‘ শিশুদিবস ’ হিসাবে পালিত হয় । জওহরলাল নেহরুর কোনাে পুত্রসন্তান ছিলাে না । একমাত্র মেয়ে । ইন্দিরা গান্ধীকে তিনি ভারতের সুযােগ্য ভাবী নেত্রী হিসাবে গড়ে তােলেন । তার মৃত্যুর কয়েক বছর পর ইন্দিরা গান্ধীও ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন
জওহরলাল নেহেরু এর মৃত্যু:
1964 সালের 27শে মে 75বছর বয়সে ভারতের এই মহান। নেতা জওহরলাল নেহরু মৃত্যুবরণ করেন ।
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জীবনের নানা ব্যস্ততা সত্ত্বেও জওহরলালের সাহিত্য প্রান হৃদয়টি নানা রচনায় নিয়ােজিত হয়েছিল ।
Soviet Russia (1928খ্রিঃ ) , কন্যা ইন্দিরাকে লেখা Let ters from a Father to his Daughter (1924খ্রিঃ ), Glimpses of World History ( 1934খ্রিঃ ), China , Spain and the War (1940 খ্রিঃ ) The Discovery India (1946 খ্রিঃ ) প্রভৃতি গ্ৰছে জওহরলালের সাহিত্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ।
পরবর্তীকালে তার আত্মজীবনী ও Discovery of India গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ হয় । তার ভাষণাবলীর সংকলন Speeches চারখন্টে ১ প্রকাশিত হয় ( 1946-64)।
-ধন্যবাদ