Super Computer কী?
Super Computer হলো অত্যন্ত শক্তিশালী ও দ্রুতগতিসম্পন্ন কম্পিউটারকে সুপার কম্পিউটার বলে। এ কম্পিউটারের গতি প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ১ বিলিয়ন ক্যারেক্টর। কোনো দেশের আদমশুমারির মতো বিশাল তথ্য ব্যবস্থাপনা করার মতো স্মৃতিভাণ্ডার বিশিষ্ট কম্পিউটার হচ্ছে সুপার কম্পিউটার। CRAY 1, supers xll এ ধরনের কম্পিউটার উদাহরন।
১৯৬০(1960) সালের দিকে কন্ট্রোল ড্যাটা কর্পোরেশন (সিডিসি) এর সেইমার ক্রে সর্বপ্রথম প্রাথমিক ভাবে সুপার কম্পিউটারের একটি ডিজাইন তৈরি করেন এবং তা পৃথিবীর কাছে তুলে ধরেন। ১৯৭০(1970) সালের দিকের সুপার কম্পিউটারগুলোতে সামান্য কয়েকটি প্রসেসর ব্যবহার করা হয়ে থাকলেও ১৯৯০(1990) সালের দিকের সুপার কম্পিউটার গুলোতে হাজার হাজার প্রসেসর(Processor) ব্যবহার হতো কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে সুপার কম্পিউটারে প্রসেসরের এ সংখ্যা লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।
সুপার কম্পিউটারগুলোতে অসংখ্য প্রসেসর নিয়ে কাজ করার জন্য সাধারণত দুটি পদ্ধতির একটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রথম পদ্ধতির নাম গ্রীড কম্পিউটিং(Grid Computing) এবং দ্বিতীয় পদ্ধতির নাম ক্লাস্টার কম্পউটিং(Cluster Computing)। গ্রীড পদ্ধতিতে বিশাল সংখ্যক কম্পিউটারের প্রসেসিং ক্ষমতা সুষ্ঠভাবে বন্টিত অবস্থায় থাকে এবং প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটারগুলোকে বৈচিত্রময় প্রশাসনিক কিছু উপায় মেনে পুনরায় আবার কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ভারত ‘পরম’ নামে সুপার কম্পিউটার তৈরি করে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশে কম্পিউটার কাউন্সিলের ল্যাবে(Council Lab) IBM RS/6O00 SP মডেলের একটি সুপার কম্পিউটার রয়েছে। ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড.কৃষ্ণমােৰ্তি ২০০৬ সালে বিসিসিকে পুরাতন মডেলের এ সুপার কম্পিউটারটি স্থাপনে সহায়তা করেন।
সুপার কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:-
- এটি কম্পিউটার পরিবারের বড় সদস্য।
- এ কম্পিউটারের কাজ করার ক্ষমতা যেকোনো কম্পিউটারের চেয়ে বেশি।
- এ কম্পিউটার যেকোনো ধরনের কাজ অতিদ্রুত করতে পারে।
- এ কম্পিউটারে একসাথে অনেক লোক কাজ করতে পারে।
- সর্বাধিক তথ্য ধারণ ক্ষমতার অধিকারী।
- একসাথে একাধিক প্রসেসর ব্যবহার করা হয়।
- ভেক্টর প্রসেসিং টেকনিক ব্যবহার করা হয়।
- জটিল ও সূক্ষ্ম গণনার কাজে ব্যবহার করা হয়।
- প্রতি সেকেন্ডে এক ট্রিলিয়ন পর্যন্ত কাজ করতে পারে।
সুপার কম্পিউটারের ব্যবহার:-
- সুপারকম্পিউটারগুলো প্রথমদিকে মূলত পারমাণবিক অস্ত্রের নকশা এবং জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রজেক্ট সমূহে ব্যবহৃত হত। কিন্তু বর্তমানে মহাকাশ, পেট্রোলিয়াম এবং স্বয়ংচালিত শিল্পে এটি অত্যাধিক ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া, সুপার কম্পিউটারগুলো প্রকৌশল বা বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাথে জড়িত ক্ষেত্রগুলোতে ব্যাপক প্রয়োগ খুঁজে পেয়েছে।
- এটি মহাকাশ গবেষণা, সামরিক আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণের নকশা, আবহাওয়া, ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, চন্দ্রের দূরত্ব নির্ণয়, মহাকাশ যান উৎক্ষেপণ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইত্যাদি বিষয়ক বড় মাপের কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ : CRAY-1, CM-200, 4D/480, CYBER-205, PARAM 8600।
- এটির মাধ্যমে উপ-পরমাণু কণার গঠন এবং মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও প্রকৃতির অধ্যয়নের ক্ষেত্র বিস্তৃতি লাভ করেছে। সুপার কম্পিউটারগুলো আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
- সুপার কম্পিউটারগুলো রিয়েল-টাইম প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন হয়।
- বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্ফোরণের প্রভাব পরীক্ষা করতে ব্যবহার করেন।
- হলিউড অ্যানিমেশন তৈরির জন্য সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে।
- সুপার কম্পিউটারগুলি অনলাইন গেমিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- সুপারকম্পিউটারগুলো বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করতে এবং স্ট্রোক, মস্তিষ্কের আঘাত এবং অন্যান্য রক্ত প্রবাহের সমস্যাগুলোর একটি ভাল ফলাফল প্রদান করতে ব্যবহৃত হয়।
- সুপারকম্পিউটারগুলো গেমের কর্মক্ষমতা স্থিতিশীল করতে সহায়তা করে।
- আবহাওয়া এবং বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রগুলো সুপার কম্পিউটারের উপর নির্ভর করে কারণ অন্বেষণকারী সৌরজগৎ, পৃথিবীকে ঘিরে থাকা উপগ্রহ এবং পারমাণবিক গবেষণার মতো অন্যান্য ক্ষেত্রগুলি থেকে ডেটা বিশ্লেষণের জন্য।
- কিছু বড় বড় কোম্পানির ডাটা স্টোরেজ হাউস বা ক্লাউড সিস্টেম থেকে দরকারী তথ্য বের করার জন্য সুপার কম্পিউটারের প্রয়োজন। যেমন বীমা কোম্পানি।
- বিজ্ঞানীরা তাদের নিজস্ব পরীক্ষাগারে সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করে নির্দিষ্ট এলাকায় কুয়াশা এবং অন্যান্য দূষণের মাত্রার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য ব্যবহার করে।