মুঘল সম্রাট আকবর এবং তার পুত্র জাহাঙ্গীরের শাসনকালে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রসার, প্রশাসনিক উন্নতি এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে। এই দুজনের শাসনকাল মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম গৌরবময় সময় হিসেবে গণ্য হয়।

আকবরের শাসন (1556-1605):

1. দ্বীন-ই-ইলাহী প্রবর্তন:

   • আকবর বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপনের চেষ্টা করেন এবং "দ্বীন-ই-ইলাহী" নামক একটি নতুন ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিভিন্ন ধর্মের উপাদানগুলির মিশ্রণ ছিল।

2. আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা:

   • আকবর প্রশাসনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করেন এবং "মনসবদারী" ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এটি সাম্রাজ্যের সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসনের ভিত্তি স্থাপন করে।

3. রাজস্ব সংস্কার:

   • রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার করে নতুন "তৌজী" বা জমিদারি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। রাজা টোডরমলের নেতৃত্বে এই ব্যবস্থা চালু হয়।

4. স্থাপত্যশৈলী এবং শিল্পকলা:

   • আকবরের সময়ে স্থাপত্য এবং শিল্পকলায় ব্যাপক উন্নতি হয়। ফতেপুর সিক্রি শহরের নির্মাণ, আকবরের সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য অবদান।

5. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা:

   • আকবর ধর্মীয় সহিষ্ণুতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি হিন্দু, জৈন, পারসি এবং খ্রিস্টান নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন এবং তাদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতেন।

জাহাঙ্গীরের শাসন (1605-1627):

1. শাসনকালীন স্থিতিশীলতা:

   • জাহাঙ্গীরের শাসনকালে সাম্রাজ্যে বেশিরভাগ সময় শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। তার শাসনামলে সাম্রাজ্যের সীমান্ত সুরক্ষিত ছিল।

2. রাজপুত সম্পর্ক:

   • রাজপুত রাজাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেন, যা আকবরের শাসনকাল থেকেই শুরু হয়েছিল।

3. চিত্রকলা এবং সংস্কৃতি:

   • জাহাঙ্গীর চিত্রকলার প্রতি অত্যন্ত অনুরাগী ছিলেন এবং তার শাসনামলে মুঘল চিত্রকলায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। মুঘল চিত্রশৈলীতে পার্সিয়ান এবং ভারতীয় শৈলীর সমন্বয় ঘটে।

4. শাহজাহানের বিদ্রোহ:

   • তার পুত্র শাহজাহানের (তখন খুররম) বিদ্রোহ দমন করেন, যা পরবর্তী সময়ে সাম্রাজ্যের জন্য বড়ো হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

5. ইংরেজদের সাথে সম্পর্ক:

   • জাহাঙ্গীরের শাসনামলে প্রথম ইংরেজ দূত, স্যার টমাস রো, মুঘল দরবারে আসেন এবং তাদের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।

আকবর এবং জাহাঙ্গীরের প্রশাসনিক নীতি এবং সংস্কার মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি মজবুত করে এবং ভারতের ইতিহাসে তাদের শাসনকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে আছে।

 

-ধন্যবাদ