■ জাতীয় স্বার্থের উপাদানসমূহ
১) ভৌগোলিক অখন্ডতাঃ দেশের প্রতিরক্ষা ও ভৌগোলিক অখন্ডতাকে নিয়ে জাতীয় স্বার্থের প্রধান গঠিত হয়। দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নটিও এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। অভন্ত্যরিন ক্ষেত্রে একটি দেশ সমস্ত রকমের বৈদেশিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকতে চায়। এই যে-কোনো মূল্যে নিজের স্বাধীন অস্তিত্ব ও ভৌগোলিক অখন্ডতা বজায় রাখার বিষটিকেই আধুনিক বিশ্বের দেশগুলি সবচেয়ে বেশি গুরুপ্ত দেয়।
২) আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যবিধানঃ জাতীয় স্বার্থের অন্যতম উপাদান হল আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যবিধান। বিশ্বের ছোটো বড়ো বিভিন্ন রাষ্ট্রকে নিয়ে যে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তার সঙ্গে মেলবন্ধন করাই হল এর মুখ্য উদ্দেশ্য। বর্তমানে বিশ্বে কোনো দেশ, সে ছোটো বড়ো যাই হোক না কেন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বাইরে টিকে থাকতে পারতেনা।
৩) অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টিকে জাতীয় স্বার্থের একটি অন্যতম গুরুপ্তপূর্ণ উপাদান বলে মনে করা হয়। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে জাতীয় স্বার্থের উপাদান হিসেবে অর্থনীতির ক্ষেত্রটি নতুন মাত্রা লাভ করেছে।
৪) সাংস্কৃতিক বিনিময়ঃ জাতীয় স্বার্থের উপাদান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি ভূমিকা রয়েছে। বর্তমান যুগে কূটনীতি, অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষার পরে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বিষয়টিকে গুরুপ্ত দেওয়া হয়েছে।
৫) আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিতে সক্রিয় অংশগ্রহণঃ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি দেশ বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সংগঠনে কতখানি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারছে তার ওপর দেশের জাতীয় স্বর্থপূরনের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভরশীল। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে বর্তমান বিশ্বে যেসব আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে উঠেছে, সেখানে জাতীয় স্বার্থপূরণের বিষয়টি একটি ভিন্ন মাত্রা পেয়ছে।
৬) বিশ্ব জনমতঃ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থের অন্যতম উপাদান হিসেবে বিশ্ব জনমতের কথা উল্লেখ করা হয়। আন্তর্জাতিক মোকাবিলায় বিভিন্ন রাষ্ট্র বিশ্ব জনমতের মাধ্যমে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ পূরণের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে থাকে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর দুই মহাশক্তিধর রাষ্ট্রই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে এই ব্যপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা যায়।
■ জাতীয় স্বার্থরক্ষার পদ্ধতি সমূহ
১) পররাষ্ট্রনীতিঃ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনো রাষ্ট্র নিঃস্বার্থভাবে অপর কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে স্থাপন করে না। মূলত জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রগুলি আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান সম্পর্কে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।
২) প্রচারঃ প্রচারের সাহায্যে একটি দেশ তার জাতীয় স্বার্থসমন্বিত পররাষ্ট্রনীতির অনুকূলে অন্যান্য দেশের মতামত গড়ে তোলে। পররাষ্ট্রনীতি রুপায়নের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হল রাজনৈতিক প্রচার।
৩) জোট গঠনঃ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থরক্ষার অন্যতম একটি উপায় হল জোট গঠন। মূলত, জাতীয় স্বার্থপূরণের উদ্দেশে রাষ্ট্রগুলি জোট গঠন করে থাকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃতে পশ্চিমি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির জোট ন্যাটো (NATO) এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে গঠিত ওয়ারেশ জোটের কথা উল্লেখ করা যায়।
৪) অর্থনৈতিক সহযোগিতাঃ প্রধান আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থরক্ষার কৌশল হিসেবে উন্নত দেশগুলি উন্নয়নশীল দেশগুলিকে অর্থনৈতিক সাহায্য ও ঋণ প্রদান করে থাকে। এভাবে উন্নত দেশগুলি আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে ঋণগ্রহীতা উন্নয়নশীল দেশগুলির সমর্থন অতি সহজেই অর্জন করতে সক্ষম হয়।
৫) বলপ্রয়োগঃ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তিধর ও অতিবৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি অনেক সময় নিজেদের জাতীয় স্বার্থপূরনের অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর বলপ্রয়োগ বা বলপ্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন করে থাকে।