রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি
ভারতের রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের মতো সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান। রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে কয়েটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন- ১) শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা, ২) আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতা, ৩) অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতা, ৪) বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতা এবং স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা।
১) শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ সংবিধানের ১৪৫(১) নং ধারা অনুসারে রাজ্যের শাসন-সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা তত্ত্বগতভাবে রাজ্যপালের হাতে রয়েছে।
ক) রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম তাঁর নামে সম্পাদিত হয়।
খ) রাজ্যের শাসন-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম যাতে যাতে সুষ্ঠূভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় নিয়মকনুন প্রণয়ন করার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে।
গ) রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য বা চান্সেলার হিসেবে রাজ্যপালের একটি স্বতন্ত্র ভূমিকা রয়েছে।
২) আইন-সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ রাজ্য আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গরূপে রাজ্যপাল যে সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী সেগুলি হল-
ক) রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করা বা অধিবেশন স্থগিত রাখার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে।
খ) রাজ্য বিধানসভা ভেঙ্গে দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে।
গ) রাজ্য আইনসভায় গৃহিত কোনো বিল রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া আইনে পরিণত হতে পারে না।
ঘ) অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিলকে তিনি রাজ্য আইনসভায় পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন।
৩) অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ রাজ্যপালের অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতাও অত্যন্ত গুরুপ্তপূর্ণ। রাজ্য বিধানসভায় বাজেট বা অর্থবিল পেশ করার আগে অর্থমন্ত্রীকে রাজ্যপালের অনুমতি নিতে হয়।
৪) বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতাঃ রাজ্য হাইকোর্টের বিচারপতিরা রাজ্যপালের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। রাজ্যের দেওয়ানি আদালতের বিচারপতি, অতিরিক্ত জেলা জজ, দায়রা জজ প্রমুখ রাজ্যপাল কর্তৃক নিযুক্ত হন। এ ছাড়া দন্ডপ্রাপ্ত কোনো অপরাধীর দন্ডাদেশ হ্রাস, স্থগিত এমনকি ক্ষমা প্রধান করার ক্ষমতাও রাজ্যপালের রেয়েছে।
৫) স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাঃ নিজস্ব বিচারবিবেচনা অনুসারে রাজ্যপালের কাজ করার ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে রাজ্য ও মন্ত্রীসভার সঙ্গে পরামর্শ করতে হয় না।
ক) পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি কর্তৃত অর্পিত হলে, রাজ্যপাল তা স্বাধীনভাবে পালন করতে পারেন,
খ) মণিপুরের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে,
গ) নাগাল্যান্ডের রাজ্যপালকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হবে,
রাজ্যপালের পদমর্যাদা
রাজ্যপাল যেহেতু নিয়মতান্ত্রিক শাসক তাই তাঁর পদটিকে নেহাতই নামসর্বস্ব পদ বলে অভিমত প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, সংবিধানের কিছু ব্যবস্থার জন্য তাঁকে পুরোপুরি নিয়মতান্ত্রিক শাসন বলা যায় না। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন যা তাঁকে শক্তিশালী প্রশাসকের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত করেছে। এজন্য সংবিধান বিশেষজ্ঞরা তাঁকে প্রকৃত শাসনকর্তা বলে অভিহিত করেন। রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি বিশ্লেষণ করে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তিনি নিছক নিয়মতান্ত্রিক শাসক নন। রাজ্যপালের একটি দ্বৈত ভূমিকা রেয়েছে। একদিকে তিনি রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান। আবার অন্যদিকে তিনি কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অধিকারী।