logo CBCE Skill INDIA

Welcome to CBCE Skill INDIA. An ISO 9001:2015 Certified Autonomous Body | Best Quality Computer and Skills Training Provider Organization. Established Under Indian Trust Act 1882, Govt. of India. Identity No. - IV-190200628, and registered under NITI Aayog Govt. of India. Identity No. - WB/2023/0344555. Also registered under Ministry of Micro, Small & Medium Enterprises - MSME (Govt. of India). Registration Number - UDYAM-WB-06-0031863

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবনী!


Netaji Subhash Chandra Bose 

Netaji Subhash Chandra Bose ছিলেন একজন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে Netaji Subhash Chandra Bose হলেন এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র যিনি এই সংগ্রামে নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। Netaji Subhash Chandra Bose নেতাজি নামে সমধিক পরিচিত। 2021সালে ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার জন্মবার্ষিকীকে জাতীয় পরাক্রম দিবস বলে ঘোষণা করেন। সুভাষচন্দ্র পরপর দুইবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত, কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা টীকা এবং বিরুদ্ধ-মত প্রকাশ করার জন্য তাকে পদত্যাগ করতে হয়। সুভাষচন্দ্র মনে করতেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর অহিংসা এবং সত্যাগ্রহের নীতি ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। এই কারণে Netaji Subhash Chandra Bose সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন। সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের সত্বর ও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে এগারো বার কারারুদ্ধ করে। Netaji Subhash Chandra Bose এর বিখ্যাত উক্তি “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরেও তার মতাদর্শের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি; বরং এই যুদ্ধকে ব্রিটিশদের দুর্বলতাকে সুবিধা আদায়ের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেন। যুদ্ধের সূচনালগ্নে তিনি লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি ও জাপান ভ্রমণ করেন ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে। জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং পরে Netaji Subhash Chandra Bose নেতৃত্ব প্রদান করেন। এই বাহিনীর সৈনিকেরা ছিলেন মূলত ভারতীয় যুদ্ধবন্দি এবং ব্রিটিশ মালয়, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত মজুর। জাপানের আর্থিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় তিনি নির্বাসিত আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্বদান করে ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ইম্ফল ও ব্রহ্মদেশে (বর্তমান মায়ানমার) যুদ্ধ পরিচালনা করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নাৎসি ও অন্যান্য যুদ্ধবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ সুভাষচন্দ্রের সমালোচনা করেছেন; এমনকি কেউ কেউ তাকে নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে অভিযুক্ত করেছেন। তবে ভারতে অন্যান্যরা তার ইস্তাহারকে রিয়েলপোলিটিক (নৈতিক বা আদর্শভিত্তিক রাজনীতির বদলে ব্যবহারিক রাজনীতি)-এর নিদর্শন বলে উল্লেখ করে তার পথপ্রদর্শক সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শের প্রতি সহানুভূতি পোষণ করেছেন। উল্লেখ্য, কংগ্রেস কমিটি যেখানে ভারতের অধিরাজ্য মর্যাদা বা ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের পক্ষে মত প্রদান করে, সেখানে সুভাষচন্দ্রই প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দেন। জওহরলাল নেহরুসহ অন্যান্য যুবনেতারা তাকে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজ মতবাদ গ্রহণে বাধ্য হয়। ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি ও তার জীবন রক্ষায় কংগ্রেস নেতাদের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ সুভাষচন্দ্র গান্ধী-আরউইন চুক্তি বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। তাকে কারারুদ্ধ করে ভারত থেকে নির্বাসিত করা হয়। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে Netaji Subhash Chandra Bose ভারতে ফিরে এলে আবার তাকে কারারুদ্ধ করা হয়।

Netaji Subhash Chandra Bose-র জন্ম 

মুক্তিযুদ্ধের অগ্রাধিনায়ক ও বীরশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী সুভাষচন্দ্রের জন্ম হয়েছিল কটক শহরে 1897 সালের 23শে January.

Netaji Subhash Chandra Bose-র পিতামাতা

বাবা জানকীনাথ বসু ও মা প্রভাবতী দেবী । বাবা জানকীনাথের বাসভূমি ছিল চব্বিশ পরগণার কোদালিয়া গ্রামে । অভাব – অনটনের মধ্যেই বড় হয়ে ওঠেন জানকীনাথ । পরে কটক শহরে গিয়ে আইন ব্যবসা শুরু করলেন । কয়েক বছরের মধ্যেই নিজের যোগ্যতায় কটকের সবচেয়ে খ্যাতিমান উকিল হয়ে ওঠেন । পরিশেষে সরকারী উকিলের পদ লাভ করেন । তিনি ছিলেন সৎ দৃঢ়চেতা মানুষ । স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় সরকারী উকিলের লোভনীয় পদকে তিনি হেলায় ত্যাগ করেন । কিন্তু উকিল হিসাবে আইনের মধ্যেই তিনি তাঁর প্রতিভা ও কর্মশক্তিকে আবদ্ধ করে রেখে জনসাধারণের কল্যাণকর্মের সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও নিজেকে জড়িত করেন । বিভিন্ন জনহিতকর কর্মের জন্য সমগ্র ওড়িশায় বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন।

   বিভিন্ন গঠনমূলক কাজের জন্য জানকীনাথ ইংরেজ সরকারের কাছ থেকে রায়বাহাদুর খেতাবে সম্মানিত হয়েছিলেন ।দেশে আইন অমান্য আন্দোলনের সময় সরকারের দমন নীতির প্রতিবাদে জানকীনাথ সরকারের দেওয়া রায় বাহাদুর খেতাব বর্জন করে লাঞ্ছিত দেশভক্তদের শ্রদ্ধা অর্জন করেন । প্রভাবতী দেবীও ছিলেন স্বামীর মতই আত্মসচেতন মহিলা । সকল ব্যাপারেই তাঁর আত্মমর্যাদাজ্ঞান ও তেজস্বিতা সকলের মনে সম্ভ্রমের উদ্রেক করত । প্রতিবেশী ও অন্যান্য সকল শ্রেণীর মানুষের দুঃখ দুর্দিনে হৃদয়ভরা সহানুভূতি ও দয়া এই দম্পতির মধ্যে প্রকাশ পেত । সুভাষচন্দ্রের মা প্রভাবতীদেবী ছিলেন উত্তর কলকাতার হাটখোলার ঐতিহ্যপূর্ণ দত্ত পরিবারের কন্যা।

Netaji Subhash Chandra Bose-র শৈশবকাল 

ছোটোবেলায় সুভাষ ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন । সবসময় মা বাবাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জানার আগ্রহ ছিল আকাশচুম্বী । পরিবারের অন্যান্যদের মতো তাঁকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য কটকের প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয়ান স্কুলে ভরতিকরা হয়েছিল । স্কুলটি ব্রিটিশ ধারায় পরিচালিত এইজন্য দেশি স্কুলগুলিতে পাঠরত সঙ্গীদের তুলনায় সুভাষচন্দ্র ইংরাজি ঘেঁষা শিক্ষায় এগিয়ে ছিলেন । এই ধরনের স্কুলে পড়ার সাথে সাথে অতিরিক্ত কিছু বৈশিষ্ট্য লাভ করানো হয় । সুভাষ হয়ে উঠলেন নিয়মানুবর্তিতার প্রতীক । সঠিক আচার ব্যবহার শিখলেন কাজে পরিচ্ছন্নতা এল তা সত্ত্বেও সাহেবী স্কুলের পরিবেশ তার ভাল লাগতো না । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে , এখানে তাকে একটা কৃত্রিম জগতের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে । স্কুলের চার দেওয়ালের বাইরে বিশাল ভারতবর্ষ পড়ে আছে । সেই ভারতের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর নিরন্ন তাদের কথা সবচেয়ে আগে চিন্তা করতে হবে । এল 1909 সাল সুভাষ তখন বারো বছরের এক বালক । ইউরোপীয়ান মিশনারী স্কুল ছাড়ার সময় হয়েছে এই খবরে সুভাষ অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। 

Nejati Subhash Chandra Bose-র শিক্ষাজীবন 

Netaji Subhash Chandra Bose এলেন Ravens Collegiate স্কুলে এখানে ভরতি হবার পর তাঁর মানসিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গেল। এই স্কুলে ভারতীয় বাতাবরণ ছিল নিজের হারানো আত্মবিশ্বাস নতুন করে ফিরে পেলেন । প্রাথমিক স্তরে তাঁকে মাতৃভাষা বাংলা শেখানো হয়নি। গোড়ার দিকে বাংলা ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে যথেষ্ট ভালো ফল করেছিলেন। কঠিন কঠোর পরিশ্রম করে বাংলা ভাষা শিখলেন। প্রথমবার — বার্ষিক পরীক্ষায় বাংলাতে সবচাইতে বেশি নম্বর পেলেন। শুধু তাই নয় , নিষ্ঠার সঙ্গে সংস্কৃত শিখতে শুরু করেছিলেন।

 খেলাধুলার প্রতি তখন থেকেই সুভাষের অনুরাগ ছিল। আক্ষেপ করে পরে বলেছেন — ‘ স্কুলে খেলাধুলার কোনো পরিবেশ ছিল না। তাই আমার মনের একটা সাধ অপূর্ণ থেকে গেছে। ‘

 Ravens Collegiate স্কুলে শিক্ষক এবং ছাত্রদের মধ্যে ওড়িয়া এবং বাহালি দুই সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন । তাদের সম্পর্ক ছিল অত্যস্ত বন্ধুত্বপূর্ণ।

 সুভাষ-এর মা – বাবা উদার মনোভাবাপন্ন হওয়াতে সুভাষ ছিলেন প্রগতিপন্থী । তখন থেকেই নানা সমাজসেবামূলক কাজে যোগ দিয়েছিলেন। 

 শিক্ষকদের মধ্যে যিনি সুভাষের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছিলেন , তিনি হলেন প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাস। তিনি এক আদর্শবাদী মানুষ শিক্ষকতাকে মহান ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ছাত্রদের মনে নৈতিক মূল্যবোধ জাগিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন , নৈতিকতার প্রতি আকর্ষণ না থাকলে মানুষ সত্যিকারের মানুষ হতে পারে না। ছাত্রজীবন থেকে ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে বিরাগের ভাব সৃষ্টি হয়েছিল। তার ছাত্রজীবনের এই বিরাগ ক্রমশঃ বিদ্বেষে পরিণত হয়ে ওঠে। এই সময় একদিন সুভাষ জানতে পারলেন , স্বদেশী আন্দোলনের সহায়ক বিবেচনা করে ইংরাজ সরকার সরকারী কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাসকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 সুভাষ স্কুল ও কলেজের ছাত্রদের সংগঠিত করে সরকারী আদেশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন। সরকারী হাইস্কুলের শিক্ষক বেণীমাধব দাস , তাকে শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে বদলী হতে হল সুভাষ তখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র।

 সুভাষের বয়স যখন পনেরো বছর , তখন তিনি মানসিক এবং আত্মিক জীবনের সবথেকে ঝঞ্ঝাতাড়িত পর্বে প্রবেশ করেন । মনের ভেতর শুরু হয়েছে তীব্র মানসিক দ্বন্দ্ব । এই দ্বন্দ্বটি ছিল জাগতিক এবং পার্থিব জীবনের মধ্যে সংশয় পরিপূর্ণ।

 প্রকৃতি – পূজা তাঁকে অনেকখানি সাহায্য করেছিল এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে। তিনি স্বামী বিবেকানন্দের অতীন্দ্রিয় জগতে প্রবেশের ছাড়পত্র পেলেন। আকস্মিকভাবে স্বামীজীর রচনাবলীর প্রতি তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। সমস্ত রাত ধরে তিনি স্বামীজীর লেখা পাঠ করতে থাকেন। পরবর্তীকালে তিনি স্বামীজীর আদর্শে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। অনেকে তাঁকে স্বামীজীর আরাধ্য কাজ শেষ করার চেষ্টা করেছেন।


 বিবেকানন্দ চর্চা করে সুভাষ এই সিদ্ধান্ত নিলেন যে , নিজের মুক্তির জন্য কাজ করা উচিত নয়। মানবসেবার জন্য নিজের সত্তাকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করতে হবে। ভগিনী নিবেদিতার মতো সুভাষ বিশ্বাস করতেন , মানুষের সেবা বলতে নিজের দেশের সেবাও বোঝায়। কারণ স্বামী বিবেকানন্দের কাছে জন্মভূমিই ছিল তার পূজার প্রতিমা। 

 প্রতিটি ভারতবাসীর কথা ভাবতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছোতে হবে । স্বদেশিকতাকে সহায় করতে হবে । পনেরো বছরের কিশোর সুভাষ তখন এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। 

 বিবেকানন্দের তেজস্বীতা , গভীর স্বদেশপ্রাণতা , ভারতকে জগৎসভায় উচ্চস্থানে প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা , আত্মজ্ঞান , আত্মশক্তিতে বিশ্বাস ও নির্ভরতা , জীবনে কুমারব্রতের সৃজনীশক্তি – ছাত্রজীবনেই সুভাষচন্দ্রের মানসিক গঠন তৈরি করেছিল । সুভাষ একটি রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ যুবগোষ্ঠী সংগঠিত করলেন । পারিবারিক বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে গেলেন । পরিবারের অনেকে তাঁর এই কাজে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন সুভাষ কিন্তু স্বীয় লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল। 


 এই সময় তিনি বাড়ি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। যোগাভ্যাসে মগ্ন থাকলেন। যে কোনো সন্ন্যাসীর আবির্ভাবের খবর পেলে তার কাছে ছুটে যেতেন । কয়েক মাস ধরে এই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলল ৷ ষোলো বছর বয়সের আগে গ্রামীণ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিলেন। বুঝতে পারলেন , গ্রামগুলির উন্নতি না হলে ভারতের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়৷

 স্কুল জীবনের শেষে কলকাতার একটি দলের বার্তাবহ এক দূত তার সঙ্গে কটকে দেখা করেন। তার মাধ্যমেই সুভাষ রাজনৈতিক জগতের সঙ্গে পরিচিত হন। কটকের নিস্তরঙ্গ আবহাওয়ার মধ্যে বসে শহর কলকাতার উদ্দীপনাপূর্ণ পরিবেশের খবর রাখতে পারেননি। ওই দূতের মাধ্যমে সবকিছু শুনলেন। কলকাতায় আসার জন্য তখন তিনি ছটফট করছেন।

Netaji Subhash Chandra Bose-র কলেজ জীবন

1913খ্রিঃ Ravens Collegiate স্কুল থেকেই সুভাষচন্দ্র প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে বৃত্তিলাভ করলেন । শেষ পর্যন্ত ঠিক করা হল উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁকে ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতায় পাঠানো হবে । এটা সুভাষের জীবনের এক ঐতিহাসিক সমাপতন । কলকাতায় না এলে তিনি পরবর্তীকালে বিশ্বের এক প্রধান রাজনৈতিক নেতৃত্বের আসনে উপবিষ্ট হতে পারতেন না । 

 কলকাতায় সুভাষের ভাগ্যে কী লেখা ছিল , পরিবারের আপনজনেরা বোধহয় আগে থেকে তা অনুধাবন করতে পারেন নি । মফসল শহর থেকে কলকাতা পারিপার্শ্বিকতার ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন । সাধারণত এই পরিবর্তনের ফল ভালোই হয় । সুভাষ কলকাতায় এসে বুঝতে পারলেন যে , এখানকার জগত অত্যন্ত জটিল , অথচ সম্ভাবনাপূর্ণ । Netaji Subhash Chandra Bose ভরতি হলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা কলেজ প্রেসিডেন্সি কলেজে । সেখানে বেশ কিছু ছাত্রের সঙ্গে দেখা হল । যাদের মনে দেশপ্রেমের আগুন জ্বলছে । 

 Netaji Subhash Chandra Bose-র কর্মজীবন

 আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণার আদর্শে উদ্ভাসিত সুভাষ সমাজসেবা সম্পর্কে অস্পষ্ট ধ্যান – ধারণা নিয়ে চলতেন । কলকাতায় এসে তিনি বুঝতে পারলেন যে , সমাজসেবা হল মানুষের জীবনের অন্যতম কাজ । ভারতের বিভিন্ন মানুষের সাথে সংযোগ রক্ষা করতে হবে । তাই ভারতের কর্মস্থান এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি ভ্রমণ করতে হবে । এইসময় সুভাষকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিলেন অরবিন্দ ঘোষ । ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে অরবিন্দ বামপন্থী চিন্তাধারা তুলে ধরে ছিলেন । পূর্ণ স্বাধীনতার দাবীও তুলেছেন । সুভাষ অরবিন্দকে জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে শ্রদ্ধা করেছেন।

 এক নিদারুণ অহরহ যন্ত্রণায় যখন অস্থির হয়ে উঠেছিলেন সুভাষচন্দ্ৰ , এই সময় ইন্দ্রদাস বাবাজী নামে এক পাঞ্জাবী সাধুর সাথে পরিচয় হল । সুভাষচন্দ্রের মনে হল সন্ন্যাস জীবনের মধ্যেই আছে মুক্তির সন্ধান। 1914সালে গুরুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন ঘুরে বেড়ালেন হরিদ্বার , মথুরা , বৃন্দাবন। কোথাও মনের মত গুরু পেলেন না। বেনারসে এসে দেখা হল রামকৃষ্ণদেবের শিষ্য স্বামী ব্রহ্মানন্দের সাথে। ব্রহ্মানন্দের সাথে জানকীনাথের পূর্ব পরিচয় ছিল। তিনি সুভাষকে নানাভাবে বুঝিয়ে গৃহে ফেরত পাঠালেন। এর কয়েক দিন পরে টাইফয়েডে শয্যাশায়ী হন। এই অসুস্থতার সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।

 এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে যায়। এই ঘটনার ফলে সুভাষের জীবনধারা আমূল পরিবর্তন হয়েছিল । ১৯১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ইংরাজী সাহিত্যের অধ্যাপক ই এফ ওটেন একদিন ভারতবর্ষ ও ভারতীয়দের সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্য করেন । ছাত্ররা দাবী করেছিল — ওটেন যেন এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চান। তিনি তা করতে রাজী হলেন না । কলেজে ধর্মঘট পালন করা হল । ধর্মঘটের নেতা ছিলেন সুভাষচন্দ্র। তাঁকে সতর্ক করা হল।

 পরের মাসে আর একটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটল । ওটেন সাহেব প্রথম বার্ষিক এক ছাত্রকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করলেন । এবার ছাত্ররা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিল । কলেজের প্রবেশপথে ওটেনকে নির্যাতন করা হল । সুভাষচন্দ্র এই ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ।সরকার কলেজ বন্ধ করে দিল। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হল। তদন্ত কমিটি সুভাষকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে কলেজ থেকে বহিষ্কার করলেন । 

 নিজের জীবনের এত বড় পরিবর্তন ঘটে গেলেও ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হলে সুভাষ মিথ্যাচার করতে পারল না। জানাল ‘ যদিও দৈহিক প্রহার দেওয়ার কাজটি আমি সমর্থন করি না , তবু আমি বলব ছাত্রদের উত্তেজিত হবার যথেষ্ট কারণ ছিল।‘ গত কয়েক বছর ধরে প্রেসিডেন্সী কলেজে ব্রিটিশরা কি পরিমাণ অন্যায় করে যাচ্ছে তাও বলতে ছাড়ল না সুভাষ । নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে এসব সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তার কোনো অনুতাপও হল না।

Netaji Subhash Chandra Bose-র দেশগৌরব উপাধি

এইভাবেই কেটে গেল সুভাষচন্দ্রের ছাত্রজীবন। এরপরের ইতিহাস আমাদের অনেকেরই জানা আছে। আই সি এস পরীক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে এসে দেশবন্ধুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সময়েই সুভাষচন্দ্র মহাজাতি সদন প্রতিষ্ঠার আয়োজন করেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে এসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ সুভাষচন্দ্রকে দেশগৌরব উপাধি দেন। সুভাষচন্দ্র দ্র কলিকাতার পৌরসভার মেয়র হয়ে অনেক গঠনমূলক কাজ করেছিলেন।

Netaji Subhash Chandra Bose Forward Block

কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই সুভাষচন্দ্র ফরোয়ার্ড ব্লক গঠন করে বাংলার বিপ্লবীদলগুলিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করলে , কংগ্রেস দল থেকে তাঁকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কৃত করা হয়। 1940খ্রিঃ সুভাষচন্দ্র একটি অস্থায়ী জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানান। এই সময় হল ওয়েল মনুমেন্ট অপসারণের দাবিতে সত্যাগ্রহ শুরু করেন এবং গ্রেপ্তার হন।

Netaji Subhash Chandra Bose-র দেশত্যাগ 

এই বছরেই কারাগারে অনশন করলে তাকে মুক্তি দিয়ে গৃহে অন্তরীণ অবস্থায় রাখা হয় । অত্যক্ত বিশ্বস্ত কিছু সহযোগীর সহযোগিতায় পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সুভাষচন্দ্র 1941খ্রিঃ 26শে January ছদ্মবেশে দেশত্যাগ করেন ৷ উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মধ্য দিয়ে সুভাষচন্দ্র কাবুল হয়ে রাশিয়া হয়ে জার্মানীতে আসেন। এখানে এক শক্তিশালী বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি ভারতের উদ্দেশে প্রচারকার্য চালাতে থাকেন। 

 ইতিপূর্বে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে মহাবিপ্লবী রাসবিহারী বসু দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়ায় এক অস্থায়ী স্বাধীন ভারত সরকার গঠন করেছিলেন। তরুণ সুভাষকে তিনি তাঁর আরব্ধ কার্য সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব তুলে দেন। তারপর সুভাষ এক অলৌকিক জীবনযাত্রাকে চোখের সামনে তুলে ধরেছেন। একটির পর একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা সর্ব অর্থেই জনগণমন অধিনায়ক হয়ে উঠেছেন। 

 আমরা মহান এই বিপ্লবীকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি। আর অবাক হয়ে ভাবি , কী অকুতোভয় সাহস এবং তেজের প্রতীক ছিলেন Netaji Subhash Chandra Bose। তা না হলে এইভাবে কেউ অসম যুদ্ধে জয়লাভ করার স্পর্ধা দেখাতে পারেন! 

Netaji Subhash Chandra Bose-র মৃত্যু রহস্য 

নেতাজি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই , তাঁর মৃত্যু ঘিরে কত না রহস্যের ঘনঘটা। তবুও প্রতিবছর 23শে জানুয়ারি তার জন্ম মুহূর্তে শঙ্খধ্বনি করা হয়।এভাবেই সুভাষচন্দ্র আমাদের মনের মণিকোঠায় চির উজ্জ্বল হয়ে বেঁচে আছেন। শেষ জীবনটি রহস্যাবৃত অবস্থায় কেটে গেছে বলেই বোধহয় Netaji Subhash Chandra Bose হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তির মহানায়ক।

-ধন্যবাদ

Popular Post:

Give us your feedback!

Your email address will not be published. Required fields are marked *
0 Comments Write Comment