অমিত্রাক্ষর ছন্দ আর মাত্রাবৃত্ত ছন্দের মধ্যে পার্থক্য
![](https://qph.cf2.quoracdn.net/main-qimg-4111d1d56623ba254cac6b1207f75c39-lq)
অমিত্রাক্ষর ছন্দ এবং মাত্রাবৃত্ত ছন্দ বাংলা কবিতার দুটি ভিন্ন ছন্দের ধরন। এদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য তাদের গঠন এবং ব্যবহারের পদ্ধতিতে। নিম্নে তাদের পার্থক্যগুলো উল্লেখ করা হলো:
অমিত্রাক্ষর ছন্দ
-
গঠন:
- অমিত্রাক্ষর ছন্দে নির্দিষ্ট পর্ব বা লাইন থাকে কিন্তু অন্ত্যমিল বা রাইম (rhyme) থাকে না।
- এটি সাধারণত বিনা অন্ত্যমিলের মুক্ত ছন্দ হিসেবে পরিচিত।
-
বিন্যাস:
- অমিত্রাক্ষর ছন্দে পংক্তিগুলো সাধারণত ১০ বা ১১ মাত্রার হয়।
- এখানে অন্ত্যমিলের পরিবর্তে তাল ও লয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
-
উদাহরণ:
- মাইকেল মধুসূদন দত্তের "মেঘনাদ বধ কাব্য" অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা একটি বিখ্যাত কবিতা।
-
স্বর্গ হতে বিদায় নিলেন দেবগণ।
মর্ত্যে অশুভের জয় ঘোষণা করিলেন॥
-
প্রয়োগ:
- অমিত্রাক্ষর ছন্দে সাধারণত একটি গুরুগম্ভীর ভাব বজায় থাকে এবং এটি মহাকাব্য বা দীর্ঘ কবিতার জন্য ব্যবহৃত হয়।
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ
-
গঠন:
- মাত্রাবৃত্ত ছন্দে প্রতিটি পংক্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক মাত্রা থাকে।
- একটি মাত্রা হলো একটি স্বরবর্ণ বা একটি স্বরবর্ণযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ।
-
বিন্যাস:
- প্রতিটি পংক্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক মাত্রা থাকে, যেমন ৮ মাত্রা, ১০ মাত্রা, ১৪ মাত্রা ইত্যাদি।
-
উদাহরণ:
-
বাংলার মুখ আমি/ দেখিয়াছি, তাই আমি/
পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর (৮ মাত্রা)
-
প্রয়োগ:
- মাত্রাবৃত্ত ছন্দে কবিতার শব্দ এবং ধ্বনির বিন্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি একটি নির্দিষ্ট ছন্দবদ্ধ গতি তৈরি করে।
তুলনামূলক পার্থক্য
- অন্ত্যমিল: অমিত্রাক্ষর ছন্দে অন্ত্যমিল থাকে না, যেখানে মাত্রাবৃত্ত ছন্দে অন্ত্যমিল থাকতে পারে বা না-ও থাকতে পারে।
- ছন্দের বিন্যাস: অমিত্রাক্ষর ছন্দে পংক্তিগুলোর মাত্রা নির্দিষ্ট থাকে কিন্তু অন্ত্যমিল না থাকায় এটি একটি মুক্ত ছন্দ, যেখানে মাত্রাবৃত্ত ছন্দে পংক্তির মাত্রা নির্দিষ্ট থাকে এবং অন্ত্যমিল থাকা বা না থাকা উভয়ই হতে পারে।
- প্রয়োগ ও বিষয়বস্তু: অমিত্রাক্ষর ছন্দ সাধারণত গুরুগম্ভীর এবং মহাকাব্যিক বিষয়বস্তুতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তুতে ব্যবহৃত হতে পারে এবং এটি আরও সুরেলা হতে পারে।
এই পার্থক্যগুলো ছন্দের সঠিক ব্যবহারে কবিদের সাহায্য করে এবং কবিতার সুর, তাল ও লয়ের বৈচিত্র্য আনে।
-ধন্যবাদ