logo CBCE Skill INDIA

Welcome to CBCE Skill INDIA. An ISO 9001:2015 Certified Autonomous Body | Best Quality Computer and Skills Training Provider Organization. Established Under Indian Trust Act 1882, Govt. of India. Identity No. - IV-190200628, and registered under NITI Aayog Govt. of India. Identity No. - WB/2023/0344555. Also registered under Ministry of Micro, Small & Medium Enterprises - MSME (Govt. of India). Registration Number - UDYAM-WB-06-0031863

Karl Marx-এর শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্ব!


শ্রেণিসংগ্রাম

  • ঐতিহাসিক বস্তুবাদ তত্ত্ব অনুযায়ী বৈর উৎপাদন সম্পর্ক উৎপাদন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণকারী সংখ্যালঘুদের সঙ্গে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের বিরােধের সৃষ্টি করে। আদিম সাম্যবাদী সমাজে ভাঙনের পর থেকে ইতিহাসের এই ধারণাটিকে অনুসরণ করা হয়। Marx একেই বলেছেন শ্রেণি সংগ্রাম। অর্থাৎ সমাজ বিকাশের এক-একটি পর্যায়ে উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে সংগতি সাধিত হয়, সমাজের সেই স্তরে শ্রেণিসংগ্রামের অবসান ঘটিয়ে। শ্রেণিসংগ্রামের মাধ্যমে এক-একটি সমাজ ব্যবস্থার উত্থান ও পতনই হল সমাজ বিকাশের অন্যতম চালিকা শক্তি। 1848 খ্রিস্টাব্দে Marx ও Engels  রচিত 'Communist Manifesto’-কে প্রথম বাক্যটিই হল আজ পর্যন্ত ইতিহাসে যত সংগ্রাম দেখা গেছে তা সবই শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস The history of all hitherto of existing society is the history of class struggles.

শ্রেণিসংগ্রামের ধাপসমূহ:

মার্কস সমাজের ক্রমবিবর্তনে ৫টি পর্যায়ের কথা উল্লেখ করেছেন, যথা আদি সাম্যবাদী সমাজ, দাস সমাজ, সামন্ততান্ত্রিক সমাজ, ধনতান্ত্রিক সমাজ এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজ।

  • আদি সাম্যবাদী সমাজে শ্রেণিসংগ্রাম: আদি সাম্যবাদী সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে কিছু ছিল না, ফলে সম্পত্তির ভিত্তিতে সমাজও শ্রেণিবিভক্ত হত না।সেই সমাজে মানুষ বাঁচার তাগিদে গােষ্ঠী বন্ধভাবে খাদ্য সংগ্রহে নিয়ােজিত থাকত। বলাবাহুল্য, উৎপন্ন দ্রব্য সকলেই সমানভাবে ভােগ করতে পারত বলেই শ্রেণিভেদ বা শ্রেণিদ্বন্দ সেইসময় পলিরক্ষিত হত না।
  • দাস সমাজে শ্রেণিসংগ্রাম: দাস সমাজ দাসমালিক ও দাস এই দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। দাস সমাজের ইতিহাস হল এই দুটি শ্রেণির মধ্যে বিরতিহীন শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস। দাসদের শ্রম শােষণ করে মুষ্টিমেয় দাস-মালিক সম্পদশালী হয়ে উঠল। দাস সমাজে প্রথমে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণা গড়ে ওঠে এবং পরবর্তীকালে দাস-মালিক ও দাস শ্রেণির মধ্যে বৈরিতামূলক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দাস সমাজব্যবস্থায় তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাস-বিদ্রোহের সূচনা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রােমে স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে দাসদের সংগ্রাম ইতিহাসের পাতায় আজও উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।
  • সামন্ত সমাজে শ্রেণিসংগ্রাম: পরবর্তী পর্যায়ের সামন্ত সমাজ শােষক সামন্তপ্রভু এবং শােষিত ভূমিদাস এই দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়। এখানে উৎপাদনের উপাদানসমূহের মালিক সামন্তপ্রভু ভূমিদাসদের অবাধে শােষণ করেছে। তাই এখানে এই দুটি শ্রেণির মধ্যে শ্রেণিসংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী। এই কারণে সামন্ত যুগের ইতিহাস হল অসংখ্য কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাস।
  • পুঁজিবাদী সমাজে শ্রেণিসংগ্রাম: বর্তমানকালের ধনতান্ত্রিক সমাজ শিল্পপতি বা বুর্জোয়া এবং শ্রমিক শ্রেণি বা সর্বহারা এই দুটি পরস্পর বিরােধী শ্রেণিতে বিভক্ত। এই পর্বে উৎপাদনের উপাদানের মালিক মুষ্টিমেয়। সংখ্যালঘু মুষ্টিমেয় শিল্পপতি শ্রেণি নিজেদের শ্রেণিস্বার্থের জন্য সংখ্যার শ্রমিক শ্রেণিকে শােষণ করে। শ্রমিক শ্রেণির দ্বারা সৃষ্ট উদ্বৃত্ত মূল্য আত্মসাৎ করাই হল ধনতান্ত্রিক সমাজে মালিক শ্রেণির প্রকৃতি। বুর্জোয়াদের শােষণ যতই বল্গাহীন হয় মেহনতি শােষণমুক্তির সংগ্রাম ততই তীব্রতর হয়। ধীরে ধীরে সংগঠিত সর্বহারা শ্রেণি রাষ্ট্রশক্তি দখল করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে শামিল হয়। এর পরিণতিতে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার পতন ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়।
  • সমাজতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণিসংগ্রাম: মার্কস ও এঙ্গেলস-এর মতে, সর্বহারা শ্রেণি অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণি ক্রমশ সংগঠিত হয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বুর্জোয়া শ্রেণির কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করবে এবং প্রতিষ্ঠিত হবে। সর্বহারার একনায়কত্বে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এইসবের ফলশ্রুতি হিসেবে শ্রেণিভেদ, শ্রেণিদ্বন্দ্ব ও শ্রেণিশােষণের অবসান ঘটে। এইভাবে সাম্যবাদী সমাজের সৃষ্টি হয়। সমাজতান্ত্রিক সমাজে, উৎপাদনের উপকরণের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা লুপ্ত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সামাজিক মালিকানা। এইভাবে শ্রেণিসংগ্রামের অবসান ঘটবে এবং মানুষের দ্বারা মানুষের শােষণের পরিসমাপ্তি ঘটবে।

মূলত, মার্কস ও এঙ্গেলস ঐতিহাসিক বস্তুবাদের দৃষ্টিতে প্রমাণ করেছেন যে, আদিম সাম্যবাদী সমাজ ব্যতীত আজ পর্যন্ত যত সমাজ উদ্ভূত হয়েছে তাদের সকলের ইতিহাস হল শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস। একসময় সমাজজীবনে শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল না, উৎপাদন ব্যবস্থার বিকাশের একটি বিশেষ স্তরে পরস্পর বিরােধী শ্রেণির আবির্ভাব ঘটেছিল। ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির সামাজিক অবস্থান এবং স্বার্থ ভিন্ন হওয়ার জন্যই শ্রেণিগুলির মধ্যে বিরােধ শুরু হয়। কোনাে শ্রেণির স্বার্থ হল পরের শ্রম আত্মসাৎ করা বা শােষণ করা, আর কোনাে শ্রেণির উদ্দেশ্য হল শােষণ থেকে অব্যাহতি পাওয়া। ড্রেপার (Draper) বলেছেন, শ্রেণির উন্মেষের পিছনে মূল কারণটি হল উদ্বৃত্ত উৎপাদন এবং সেই উদ্বৃত্ত সম্পদকে করায়ত্ত করে তার উপরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শ্রেণিব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

শ্রেণিসংগ্রামের সমালােচনা:

  • মার্কসীয় মতবাদের শ্রেণি ও শ্রেণিসংগ্রাম সংক্রান্ত তত্ত্ব বিভিন্ন দিক থেকে সমালােচনার সম্মুখীন হয়েছে।
  • মার্কসীয় দর্শনে রাষ্ট্রকে কেবলই শ্রেণিশােষণের যন্ত্র হিসেবে দেখানাে হয়েছে। কিন্তু আধুনিক জনকল্যাণব্রতী রাষ্ট্রকে শ্রেণিশােষণের যন্ত্র বলা যায় না।
  • মার্কস সর্বকালীন সমাজ ব্যবস্থায় পরস্পর বিরোধী দুটি শ্রেণির অস্তিত্বের কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তবে বিত্তবান ও বিত্তহীন বা শােষক ও শােষিত শ্রেণি ছাড়াও সমাজে বিভিন্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
  • মার্কসীয় মতবাদে কেবল অর্থনৈতিক স্বার্থের ভিত্তিতে শ্রেণিসংগ্রামের কথা বলা হয়েছে। বাস্তবে কিন্তু অর্থনৈতিক স্বার্থ ছাড়াও নানা কারণে সমাজে সংঘাতের সৃষ্টি হয়ে থাকে।

মূল্যায়ন: উপরোক্ত বিরূপ সমালােচনা সত্ত্বেও শ্রেণি ও শ্রেণিসংগ্রাম সম্পর্কে মার্কসবাদের বৈজ্ঞানিক তাৎপর্যকে কোনােমতেই অস্বীকার করা যায় না। বিভিন্ন গৌণ শ্রেণির অস্তিত্ব সত্ত্বেও কোনাে সমাজে উৎপাদন সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে পরস্পরবিরােধী দুটি মুখ্য শ্রেণির উপস্থিতি এবং তাদের মধ্যে শ্রেণিসংঘাতের ঘটনা হল ঐতিহাসিক সত্য। আবার সমাজে বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট সংঘাতের মধ্যে অর্থনৈতিক সংঘাতই হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শ্রেণিসংগ্রামের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর তারাই সাধারণ মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং তখন থেকেই মানুষ সম্পূর্ণ সচেতন ভাবে নিজেদের ইতিহাস রচনা করবে বলে মার্কসবাদী দাবি করেন। অ-মার্কসবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাকাইভারও শ্রেণিসংগ্রামের তত্ত্ব কে উপেক্ষা করতে পারে না। তাই সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিবর্তনের ক্ষেত্রে শ্রেণিসংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না।

-ধন্যবাদ

Popular Post:

Give us your feedback!

Your email address will not be published. Required fields are marked *
0 Comments Write Comment