Sachin Tendulkar Biography
বিশ্ববন্দিত ভারতরত্ন ক্রিকেটার শচীনরমেশ তেন্ডুলকর – যদি প্রশ্ন করা হয় , পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেট খেলোয়াড় কে ? তাহলে সকলে এক বাক্যে উত্তর দেবে শচীনরমেশ তেন্ডুলকর বা শচীন টেন্ডুলকার (Sachin Tendulkar) । অনেকে বলে থাকেন , ধারাবাহিকতায় শচীন টেন্ডুলকার (Sachin Tendulkar) ডন ব্রাডম্যানকেও ছাড়িয়ে গেছেন । এমনকি ডন এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন- “ আমার দেখা ক্রিকেট খেলোয়াড়দের মধ্যে শচীন সর্বোত্তম । ” কিছুদিন পূর্বে শচীন টেন্ডুলকার (Sachin Tendulkar) এমন একটা রেকর্ড করেছেন , যা কোনোদিন কেউ ভাঙতে পারবেন বলে মনে হয় না । টেস্ট এবং একদিনের ম্যাচ মিলিয়ে ১০০ টি সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে শচীন টেন্ডুলকারের (Sachin Tendulkar)।
(Sachin Tendulkar Jivani Bangla. A short biography of Sachin Tendulkar. Sachin Tendulkar Birth, Place, Movie, Life Style, Life Story, Life History, Biography in Bengali) শচীন টেন্ডুলকার এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Sachin Tendulkar একজন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার। শচীন টেন্ডুলকার (Sachin Tendulkar) ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চমানের ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। Sachin Tendulkar মাত্র 16 বছর বয়সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় এবং এরপর থেকে প্রায় চব্বিশ বছর শচীন টেন্ডুলকার (Sachin Tendulkar) আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলেন। Sachin Tendulkar টেস্ট ক্রিকেট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় সর্বোচ্চসংখ্যক শতকের অধিকারীসহ বেশ কিছু বিশ্বরেকর্ড ধারণ করে আছেন।
Sachin Tendulkar এর জন্ম হয়েছিল Mumbai- তে 1973 সালের 24 April । শচীন জন্মেছিলেন নেহাতই এক মধ্যবিত্ত পরিবারে।
শচীন টেন্ডুলকার (Sachin Tendulkar) এর পিতার নাম রমেশ তেন্ডুলকর ও মাতার নাম রজনী তেন্ডুলকর । শচীন টেন্ডুলকার (Sachin Tendulkar) যেখানে থাকেন , সেই অঞ্চলে মধ্যবিত্ত মানুষের বসবাস । জায়গাটাকে বলা হয় সাহিত্য সহসম কলোনী । এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ । শচীন সম্পূর্ণ স্বাধীন সত্তায় নিজেকে মেলে ধরতেন । ছোটোবেলায় শচীন টেন্ডুলকার (Sachin Tendulkar) ছিলেন খুব দুরস্ত । শচীন , অবিনাশ আর সুনীল ছিলেন তিন বন্ধু । তিন জন আমগাছে চড়ে মজা করতেন । বয়স্ক লোকেদের নজরে পড়ে গেলে ছুটে পালিয়ে যেতেন ।
গরমের ছুটিতে তিনমূর্তি সারাদিন শুধু খেলে বেড়াতেন । কখনো ক্রিকেট , কখনো লুকোচুরি , আবার কখনো সাইকেল ভাড়া নিয়ে এখানে সেখানে যাওয়া । কোনো ব্যাপারেই বিন্দুমাত্র ক্লান্তি ছিল না সেদিনের বালক শচীনের । প্রত্যেক খেলায় শচীন নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতেন । প্রথমে আমরা লুকোচুরি খেলার কথা বলব । যখন অন্যদের খোঁজার পালা আসত , তখন শচীন এক জায়গায় বসে থাকতেন ৷ বেশ কিছুক্ষণ পর বন্ধুরা ঘেমে নেয়ে সামনে এলে ধরে ফেলতেন । সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রেও শচীন একটির পর একটি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন । প্রতিপক্ষকে হারিয়ে আনন্দ পেতেন । কেউ শচীনের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারতেন না ।
গরমকালের সন্ধেবেলা শচীনরা ডাম্মি খেলতেন । এটি এক মজার খেলা । সবাই কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতেন । শচীন কম্বলের ওপর আলতো করে হাত বুলিয়ে বলতেন কে কোনজন । এই খেলার সময় শচীন কিছুতেই পাখা চালাতে দিতেন না । গরমে সেদ্ধ হয়ে মরে গেলেও পাখা বন্ধ রাখতে হত । কারণটা কী ? ভেন্টিলেটারে পায়রার বাসা ছিল । পাখা চললে ওদের যদি আঘাত লাগে , তাই শচীনের এই বিধি নিষেধ ।
সারাজীবন শচীন এমনই মানবিকতার পরিচয় রেখেছেন । একবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারতীয় দল অনুশীলন করছে । শচীনকে নেটে দেখা গেল না । শচীন কোথায় ? অনুশীলনে ফাঁকি দেওয়া শচীন সহ্য করতে পারেন না । নজরে পড়ল সকলের , শচীন অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে একটি বাচ্চা ছেলেকে আন্ডার আর্ম বল ধরে খেলাচ্ছে । ছেলেটি বেজায় খুশি হয়ে ব্যাট করছে । কারণ কী ? জানা গেল ছেলেটির লিউকোমিয়া অর্থাৎ ব্লাড ক্যান্সার , যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে । তার জীবনের শেষ ইচ্ছে শচীনের সঙ্গে একবার খেলবে । এই কথাটা শচীনের কানে পৌঁছে গেছে । তাই তিনি নেট ছেড়ে ছেলেটির সাথে খেলতে এসেছেন । এমনই মমত্ববোধ শচীনের ।
“ তবে দুরস্ত হলেও শচীন কিন্তু দারুণ ভালো ছেলে ছিল । আড়াই বছর বয়স থেকে ক্রিকেটের অসম্ভব ভক্ত । আমাকে অনবরত টানাটানি করত ওর সঙ্গে ক্রিকেট খেলার জন্য । আমি একটা প্লাস্টিকের বলে বল করতাম । আর ও ছোটো লাঠি ব্যাটের মতো বানিয়ে ধরত । একটাও ফসকাত না । ”
তিনি আরও বলেছেন “ আমি হলাম শচীনের প্রথম বোলার । ধীরে ধীরে শচীন বড়ো হল । স্কুলে গেল । সেখানে গিয়েও খেলার মাঠে যথেষ্ট নাম করল । বিয়ের সময় শচীন কী কান্ড ঘটিয়ে ছিল , সেটাও একবার শুনে নেওয়া যাক । আমি ছিলাম ওর বিয়েতে বিশেষ আমন্ত্রিত ৷ বলা নেই , কওয়া নেই , হঠাৎ দেখি শচীনের ভাই অজিত আর বন্ধু সুনীল গাড়ি নিয়ে দোড়গোড়ায় হাজির । আমাকে দেখে শচীন আর ওর বউ অঞ্জলি এসে প্রণাম করল । বিশ্বাস করুন আমি চোখের জল সামলাতে পারিনি । ঠাকুরের কাছে সবসময় প্রার্থনা করি , ওরা যেন ভীষণ — ভীষণ ভালো থাকে আর সুখে থাকে । সাহিত্য সহবাস কলোনীর আশে পাশে রাস্তায় আমায় দেখতে পেলেই শচীন গাড়ি থামিয়ে একছুটে আমার কাছে চলে আসে । আমার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে , আমি কেমন আছি । ”
এই হলেন শচীন , সকলের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসেন । ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে শচীন এলেন খেলার আসরে । তখন থেকেই বোঝা গেল যে , ক্রিকেট ইতিহাসে এক নতুন তারকার জন্ম হচ্ছে । শচীনের জীবনের চলার পথে অনেক বাধা বিপত্তি এসেছে । তবে শচীন কিন্তু ভেঙে পড়েননি । সেবার সারদা আশ্রমের হয়ে স্কুল ক্রিকেটে দারুণ খেলেছিলেন শচীন । ভেবেছিলেন বর্ষসেরা জুনিয়ার ক্রিকেটারের সম্মান পাবেন । কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এই সম্মান শচীন পাননি ৷ তেরো বছর বয়সী সেই কিশোরের মানসিক যন্ত্রণার কথা বুঝতে পেরেছিলেন বিখ্যাত ক্রিকেটার সুনীল গাভাসকার । তিনি একটি চিঠিতে বলেছিলেন “ গত মরশুমে দারুণ খেলার জন্য অভিনন্দন । অন্যরা যখন খেলতে পারেনি , তখনও তুমি একাই চমৎকার খেলে গিয়েছ । এভাবেই চালিয়ে যাও । বোম্বাই ক্রিকেট সংস্থার কাছ থেকে সেরা জুনিয়ার ক্রিকেটারের পুরস্কার পাওনি বলে হতাশ হয়ো না । তুমি যদি ওই সম্মান প্রাপকদের তালিকায় চোখ বোলাও , দেখবে , সেখানে এমন একজনের নাম নেই , যে টেস্ট ক্রিকেটে খুব একটা খারাপ খেলেনি ! ”
গাভাসকার হয়তো নিজের জীবনের কথা মনে করেছিলেন । ১৯৮৭ সালের ৩ আগস্ট বিশ্ববন্দিত ক্রিকেটার গাভাসকারের কাছ থেকে এই চিঠি পেয়ে শচীন আবার উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন । দু’বছরের মধ্যেই সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় ক্রিকেটার হিসাবে টেস্ট দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন ।
আর এক ক্রিকেট ব্যক্তিত্বকে শচীন খুবই শ্রদ্ধা করেন , তিনি হলেন দিলীপ বেঙ্গসরকার । শচীনের খেলা দেখে মুগ্ধ ভারত অধিনায়ক বেঙ্গসরকার তাকে বিলেতি ‘ গান অ্যান্ড মুড ’ ব্যাট উপহার দিয়েছিলেন । কপিলদেবকে ডেকে এনে বলেছিলেন , শচীনের ওপর বিশেষভাবে নজর রাখতে ।
চোদ্দো বছরের কিশোরকে শচীন টেন্ডুলকার (Sachin Tendulkar) প্রথম বোম্বাই রাজ্য দলে সুযোগ করে দেন । গুজরাটের বিরুদ্ধে প্রথম রনজি ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ছিলেন শচীন । তারপর ব্যাট হাতে শুরু হল তাঁর বিশ্বশাসনের পালা ।
১৯৯৮ সালে ৩৪ ম্যাচে ১৮৯৪ রানের বিশ্বরেকর্ড আছে এক বিশ্বকাপে ৫২৩ রানের নজির আছে । স্কুল ক্রিকেটে বিনোদ কাম্বলির সঙ্গে জুটিতে ৬৬৪ রানের বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন । ১৬ ই মার্চ ২০১২ শততম শতরানের শৃঙ্গে ক্রিকেটের মহানায়ক শচীনরমেশ তেন্ডুলকর । শচীন টেন্ডুলকার (Sachin Tendulkar) ৬৫১ ম্যাচে ৩৩ , ৮৫৮ রান ও ১০০ সেঞ্চুরি করেছেন । ( ১৬ ই মার্চ ২০১২ পর্যন্ত ) । ওয়ান ডে ৪৯ টেস্ট ৫১ টি ১৯৯৭ সেঞ্চুরি । দেশে ৪৪ বিদেশে ৫৬ ( ১৬.৩.২০১২ পর্যন্ত ) শচীন টেন্ডুলকার (Sachin Tendulkar) শততম সেঞ্চুরিটি করেছেন এশিয়া কাপে মিরপুরে বাংলা দেশের বিরুদ্ধে ১৪৭ বলে ১১৪ রান , স্ট্রাইকরেট ৭৭ এর কিছু বেশি।
পৃথিবীর ক্রিকেট প্রেমী মানুষেরা দুচোখ ভরে দেখেছেন জীবন্ত কিংবদন্তী মহানায়কের মহান কীর্তি । পেয়েছেন রাজীব গান্ধী খেলরত্ন ৯৮ সালে এবং অর্জুন পুরস্কার ১৯৯৪ সালে । ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে প্রবাদপ্রতীম ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকর ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান ভারতরত্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন । শচীন টেন্ডুলকার (Sachin Tendulkar) রাষ্ট্রপতি মনোনিত রাজ্যসভার সদস্য হিসাবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন ৷