বর্তমানে কম্পিউটার শুধু গাণিতিক সমস্যার সমাধান বা জটিল সমস্যা ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যবহারিক প্রয়োগের ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটারের শ্রেণীবিভাগটি নিম্নরূপ -
অ্যানালগ কম্পিউটার (Analogue Computer) :
যে সকল কম্পিউটারে পরিমাপের ক্ষেত্রে তথ্যের সূক্ষ্ম বা সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না তাদের অ্যানালক কম্পিউটার বলে।
যেমন :
বৈদ্যুতিক তারের ভোল্টেজের ওঠা-নামা, কোনো পাইপের ভেতরের গ্যাসীয় বা তরল পদার্থেরব চাপের তারতম্য, বায়ুপ্রবাহ ও চাপ পরিবর্তিত হওয়া ইত্যাদি পরিমাপ করতে অ্যানালগ কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। স্লাইড রুল, লিবনিজের স্টেপ্ড রেকনার হল অ্যানালক কম্পিউটারের উদাহরন।
বৈশিষ্ট :
এই ধরনের কম্পিউটার দ্বারা কোনো পরিবর্তশীল বস্তু বা পদার্থের পরিমাপ নির্ণয় করা যায়।
খুবই জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে।
এই ধরনের কম্পিউটারগুলি উচ্চ সঞ্চয়ক্ষমতা সম্পন্ন
কম্পিউটারের ফলাফল প্রকাশের সূক্ষ্মতা কখনই 100 শতাংশ সঠিক হয় না।
ডিজিটাল কম্পিউটার (Digital Computer) :
যে সকল কম্পিউটার ডিজিটাল নির্দেশ দ্বারা পরিচালিত হয় তাদের ডিজিটাল কম্পিউটার বলে। কম্পিউটার সাধারনত দুটি সংখ্যা পড়তে বুঝতে পারে, একটি 1 এবং অপরটি 0 (শূন্য)। এখানে 1-এর অর্থ ON এবং O-র অর্থ OFF বোঝায়। যে সকল গণনার কাজে আমরা সঠিক ও সূক্ষ্ম ফলাফল পেতে চাই সেই সকল কাজে ডিজিটাল কম্পিউটার ব্যবহার করি। বর্তমানে ব্যবহৃত প্রায় সবই ডিজিটাল কম্পিউটার।
বৈশিষ্ট্য :
এই ধরনের কম্পিউটারগুলি কাজ করে সংখ্যার (1 এবং 0) মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্দেশ দ্বারা।
ডিজিটাল কম্পিউটারে প্রাপ্ত ফলাফল সম্পূর্ন সূক্ষ্ম প্রকৃতির।
এই কম্পিউটারগুলি গাণিতিক ও যুক্তিনির্ভর কাজ করতে সক্ষ্মম।
কম্পিউটারগুলি বিজ্ঞানভিত্তিক এবং ব্যবসায়িক কাজের উপযুক্ত।
কম্পিউটারগুলি মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝতে পারে।
হাইব্রিড কম্পিউটার (Hybrid Computer) :
যে সকল কম্পিউটারে অ্যানালগ ও ডিজিটাল এই দুইপ্রকার কম্পিটারের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তাদের হাইব্রিড কম্পিউটার বলে। এই ধরনের কম্পিউটারগুলিতে অ্যানালগ কম্পিউটারের কার্যের গতি এবং ডিজিটাল কম্পিউটারের নির্ভুলতা উভয়ই পরিলক্ষিত হয় বলে হাইব্রিড কম্পিউটারগুলি সাধারনত খুব গতিশীল ও নির্ভুল প্রকৃতির হয়। রোবট একপ্রকার হাইব্রিড কম্পিউটারের উদাহরন।
হাইব্রিড কম্পিউটার সাধারনত হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। সেখানে এই কম্পিউটারের অ্যানালগ অংশটি কোনো রোগীর হৃতপিন্ড (Heart Bit), রক্তচাপ (Blood Pressure) ইত্যাদি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়। আবার ডিজিটাল অংশটির সাহায্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ইত্যাদি পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়।
সুপার কম্পিউটার (Super Computer) :
এই কম্পিউটারের গণনা করার ক্ষমতা অন্য সমস্ত কম্পিউটার থেকে অনেক বেশি। পৃথিবীতে আবিস্কৃত সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী এবং সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন কম্পিউটার সুপার কম্পিউটার। সাধারনত ব্যক্তিগত কাজে এই কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় না। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, তৈল খনি অনুসন্ধান করা, অস্ত্র গবেষনা, মিলিটারি রিসার্চ এবং যে সব কাজে অত্যন্ত জটিল গণনা খুব কম সময়ে করে ফেলা প্রয়োজন সেই সমস্ত ক্ষেত্রে সুপার কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ : CRAY-1, CRAY-2, PARAM 2000 (ভারতের তৈরি সুপার কম্পিউটার)।
বৈশিষ্ট্য :
সর্বাপেক্ষা দ্রুত এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে সক্ষম।
ন্যানো বা পিকো সেকেন্ডে কাজ করতে সক্ষম।
এই কম্পিউটারে একাধিক প্রসেসর (CPU) ব্যবহৃত হয়।
একসঙ্গে অনেকগুলি নির্দেশ একই সময়ে পরিচালনা করতে পারে।
মেইন ফ্রেম কম্পিউটার (Main Frame Computer) :
সুপার কম্পিউটার থেকে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী কম্পিউটার হল মেইন ফ্রেম কম্পিউটার। এই কম্পিটারগুলি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন, যার দ্বারা বড় বড় এবং জটিল গণনার কাজ সম্পাদন করা হয়। এই কম্পিউটারের গণনা করার ক্ষমতা এত বেশি যে শুধু একজন ব্যবহারকারী এই কম্পিউটারের CPU-র সম্পূর্ণ গণনা ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারে না। এই কম্পিউটারগুলি কোনো দেশের প্রতিরক্ষা দপ্তর, বিমান ও রেল পরিষেবায় ব্যবহার করতে দেখা যায়। উদাহরন : IBM, HITACHI ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য :
টাইম শেয়ার বা সময় বিভাজন পদ্ধতি একই সময়ে কাজ করে।
বিপুল পরিমান তথ্য নিয়ে কাজ করতে সমক্ষ।
আকৃতিতে একটি ঘরের সমান।
মিনি কম্পিউটার (Mini Computer) :
মেইন ফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে মিনি কম্পিউটারের কাজ করার ক্ষমতা ও কাজের গতি অপেক্ষাকৃত কম। মেইন ফ্রেম মিনি কম্পিউটারের মধ্যে কাজের প্রকাদভেদ ও প্রক্রিয়াগত দিক থেকে কোনো পার্থক্য নেই। মিনি কম্পিউটারে মাল্টি প্রসেসিং (Multi-processing) এবং মাল্টি ইউজার (Multi user) ব্যবস্থা আছে। এর সাহায্যে একটি মিনি কম্পিউটারে একসঙ্গে একাধিক প্রোগ্রাম চালানো যায় এবং একাধিক কম্পিউটার ব্যবহারকারী (Computer users) কাজ করতে পারে। উদাহরন : PDP-8, IBM-8100 Series
বৈশিষ্ট্য :
এই কম্পিউটারগুলি ব্যয়বহুল।
এই কম্পিউটারগুলি মাল্টি ইউজার এবং মাল্টি টাস্কিং পদ্ধতিতে কাজ করে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান মূলক কাজ ও CAD(Computer Aided Desing) ডিজাইনের কাজে ব্যবহৃত হয়।
মাইক্রো কম্পিউটার (Micro Computer) :
এই কম্পিউটারগুলি ছোট আকারের কম্পিউটার। যে সকল কম্পিউটার সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট হিসাবে মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহার করা হয় তাদের মাইক্রো কম্পিউটার বলা হয়। বাড়ি, অফিস-আদালত, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি স্থানে এই কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
বৈশিষ্ট্য :
এই কম্পিউটারগুলি আকৃতিতে ছোট।
এই কম্পিউটারগুলি দামেও অনেক সস্তা।
স্মৃতি বা মেমোরী অন্য কম্পিউটারগুলির তুলনায় অনেক কম।
ল্যাপটপ (Laptop) :
ল্যাপটপ আকারে পার্সোনাল কম্পিউটার বা PC-এর তুলনায় অনেক ছোট হয়। দেখতে অনেকটা এটার্চির (Atterchi Case) মতো। এটিকে সহজেই কোলে নিয়ে করা যায় এবং ব্যাগে নিয়ে সহজেই বহন করা যায়। ল্যাপটপ ইলেকট্রিক ও রি-চার্জেবল ব্যাটারি উভয়ের দ্বারাই চালানো যেতে পারে। এই কম্পিউটারগুলির ওজন 2 থেকে 4 কিলোগ্রামের মতো। এটি ঠিক ডেক্সটপের মতো ব্যবহার করা হয়।
আধুনিক সামজ জীবনে কম্পিউটারের ব্যবহার (Computer in Modern Society) :
আধুনিক সমাজ জীবনে কম্পিউটার যে যে ক্ষেত্রগুলিতে ব্যবহৃত হচ্ছে সেই ক্ষেত্রগুলি হল-
বিজ্ঞান গবেষণা (Scientific Research) :
বৈজ্ঞানিকরা বিজ্ঞান গবেষণার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটারকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো জটিল গণনাকে অতি দ্রুত সম্পন্ন করেন। তাই বিজ্ঞান গবেষণায় কম্পিউটারের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রকাশনার কাজ (Publication Work) : বই, সংবাদ