Water Pollution:
প্রযুক্তির আধুনিক যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে প্রকৃতির ওপর মানুষের প্রাধান্য বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে হয়েছে। মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে ও লোভের বশবর্তী হয়ে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে নির্বিচারে প্রায়ই প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সম্পদ আরোহন শোষণ ও ধ্বংস করে চলেছে। আবার সুখ স্বাচ্ছন্দ ও সমৃদ্ধির তারণায় প্রকৃতির বুকে নগরায়ন শিল্পায়ন উভয় ঘটে চলেছে ,যার ফলে পরিবেশের অবনমন ঘটে ও জীবকুলের ক্ষতি হয় এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর কুফল মানুষকে ভোগ করতে হয়।
জল দূষণ বায়ু দূষণ ও মাটি দূষণ প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনমন Environmental Degradation ঘটে। যার ফলে মানুষের উপর পশু পাখিদের উপর এমনকি উদ্ভিদ ও আবহাওয়া জলবায়ু ইত্যাদির উপরে পরে কু প্রভাব পরে।মনুষ্য শরীরে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে, যেমন জল দূষণের ফলে পেটের রোগ, বায়ু দূষণের ফলে ফুসফুসের রোগ, শব্দ দূষণের ফলে হৃৎপিণ্ডের রোগ ইত্যাদি।যার ফলে পরিবেশের গুণমান হ্রাস পাই ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়।
Deffination of Water Pollution:
পরিবেশের কোনো অবাঞ্ছিত পদার্থ জলের সঙ্গে মিশে জলের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন ঘটে এবং তার থেকে উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের
ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে জলের সেই আশঙ্কাকে জল দূষণ বলে।
Monibascom (1984)এর মতে “জলের বৈশিষ্ট্যের এবং গুণগত মানের কুফল দায়ী পরিবর্তন হলো Water Pollution।
Scientist Southwick (1976) বলেছেন “প্রধানত মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কার্যকলাপ ও প্রাকৃতিক কারণে জলের প্রাকৃতিক, রাসায়নিক ও জৈব উপাদানের গুণমান নষ্ট হওয়াই হল Water Pollution. অর্থাৎ প্রকৃতি প্রদত্ত বিশুদ্ধ জলে নানা ধরনের অবাঞ্ছিত বস্তু বা জীবাণু মিশে তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে ওঠাকে ater Pollution বলা হয়।
প্রধান জল দূষণ কারী পদার্থ:
যেসব অবাঞ্ছিত পদার্থ জলকে দূষিত করে তাদের জল দূষক বলে।
1.রোগ সৃষ্টিকারী দূষক পদার্থ-
- Bacteria, Viruses, Protozoa and ও পরজীবী কীট।
2.আবর্জনা (Gerbage)-
- অক্সিজেন কাঙ্খিত আবর্জনা, জৈব আবর্জনা যেগুলির বায়বীয় ব্যাকটেরিয়া পচিয়ে দেয়।
3.জলে দ্রাব্য অজৈব রাসায়নিক পদার্থ-
- অম্ল লবণ, বিষ সৃষ্টিকারি ধাতব যৌগ যেমন পারদ, সিসা, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড ,তামা, ক্রোমিয়াম,দস্তা,ফ্লুয়োরাইড।
4.অজৈব পুষ্টি মৌল –
- জলে দ্রবীভূত নাইট্রেট, ফসফেট, সালফার, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম।
5.জৈব রাসায়নিক দ্রব্য-
- তেল, প্লাস্টিক, কীটনাশক, সাফাই করার দ্রাবক, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি।
6.পলি বা ভাসমান পদার্থ –
- মাটি অদ্রাব্য কনা ও অন্যান্য ভাসমান কঠিন পদার্থ।
7.তেজস্ক্রিয় পদার্থ (Radioactive materials)–
- জলে দ্রবীভূত বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পদার্থ যেমন-ইউরেনিয়াম।
Source of Water Pollution:
- পেট্রো রাসায়নিক শিল্পে, পলিথিন ও প্লাস্টিক শিল্পে, জ্বালানি শিল্পে, খনিজ তেল পরিশোধন শিল্পে, বিভিন্ন রকম যানবাহন নির্মাণ, ছোট ও মাঝারি ইলেকট্রিক্যাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে প্রচুর পরিমাণে দূষিত রসায়ন পদার্থ যেমন Ammonium Chloride, Cyanide এবং বিভিন্ন ধাতু জিংক, পারদ, সিসা ইত্যাদি জলে মিশে জলকে দূষিত করে।
2.গৃহস্থলীর আবর্জনা-
- গ্রাম এবং শহর এলাকার বিভিন্ন আবর্জনা বর্জ্য পদার্থ যেমন দৈনন্দিন রান্নার বস্তু, গৃহস্থলীর কাজে ব্যবহৃত জল এবং হোটেল-রেঁস্তোরা প্রভৃতি থেকে নির্গত জল ,খাদ্যদ্রব্যের ফেলে দেওয়া অংশ ,শাক সবজির পচা অংশ -ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতি জীবাণু মিশ্রিত হয়ে নর্দমা পয়ঃ প্রণালী দিয়ে নদনদী, হ্রদ,খাল ও সমুদ্রের জলে পড়ে জল দূষণ ঘটায়।বিভিন্ন জলাশয়ে জল মানুষের যথেচ্ছ ব্যবহার, মলমূত্র ত্যাগ, গবাদি পশুর স্নান,জামা কাপর কাচা ইত্যাদি যার ফলে তাতে বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবানু জন্মায় ও জলকে দূষিত করে।
3.কৃষিক্ষেত্র থেকে জলদূষন-
- চাষের খেতে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক সার, কীটনাশক,আগাছানাশক প্রভৃতি দেওয়ার ফলে সেগুলি জলে পড়ে জলকে দূষিত করে।ছত্রাকনাশক,পতঙ্গনাশক, লেড আর্সিনেট, প্যারিস গ্রীন ,অজৈবপেস্টনাশক, DDT,অলড্রিন ও জৈব কীটনাশক প্রভৃতি এইসব কৃষি ক্ষেত্রের বর্জ্য বৃষ্টির জলের সঙ্গে জলাশয়ে পড়ে জল দূষিত করে।
4.তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে জল দূষণ-
- পারমাণবিক চুল্লি কেন্দ্র, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় পদার্থ গুলো সমুদ্র বা নদীতে ফেলা হয় যার ফলে জল দূষণ ঘটে ঘটে।
5.খনিজ তেল থেকে জল দূষণ-
- দুর্ঘটনাগ্রস্ত তেলবাহী জাহাজ থেকে অথবা সমুদ্রে অবস্থিত তেলের খনি থেকে এমনকি সমুদ্র বন্দর থেকে খনিজ তেল মিশে জল দূষণ ঘটায়।
6.তাপীয় দূষণ –
- তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কারখানায় ব্যবহৃত উষ্ণ দূষিত জল, বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে সরাসরি জলাশয় মেশে অথবা নদীতে মিশে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয় ও জল দূষণ ঘটায়।
7.বায়ুদূষণের কারণে জল দূষণ-
- কলকারখানা ও যানবাহনের মাধ্যমে বাতাসে সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ইত্যাদি জমা হয় ও পরে তা অম্ল বৃষ্টি হয়ে মাটিতে তথা জলাশয় মেশে ও জল দূষিত করে।
8.আর্সেনিক দূষণ –
মাটির নিচের স্তর থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতিরিক্ত জল তুলে নেওয়ার ফলে মাটির নিচে ফাঁকা জায়গায় আর্সেনিক বাতাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে শাক্ত ধাতব যৌগ তৈরি করে জলকে দূষিত করে ।
Effect of Water Pollution:
জলের অপর নাম জীবন। তাই জল দূষিত হওয়ার অর্থ হল জীবকুল কে বিরাট ক্ষতির ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । জলদূষনে মানবদেহে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়,জলদূষণের প্রভাব গুলি হল---
1.দূষিত জল পান করলে ও প্রাত্যহিক কাজে ব্যবহার এর বিভিন্ন রকম সংক্রামক রোগ ঘটতে থাকে যেমন-
- পানীয় জলে মিশে থাকা Vibro cholera নামক ব্যাকটেরিয়া কলেরা রোগ সৃষ্টি করে। এই রোগটি তে জলের মতো পাতলা পায়খানা ও বমি হয় ফলে রোগীর দেহ জলশূন্য হয়ে পড়ে। Salmonella typhi নামক ব্যাকটেরিয়া টাইফয়েড রোগ সৃষ্টি করে, জল বাহিত এই রোগের প্রভাবে তীব্র জ্বর মাথা ধরা ও পেট ব্যথা হয়।Entamoeba histolytica নামক প্রোটোজোয়া আমাশয় রোগ সৃষ্টি করে, এই রোগে শ্লেষ্মাযুক্ত পাতলা পায়খানা হয়।এছাড়াও প্যারা টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, জিয়ারডিয়াসিস প্রভৃতি রোগ হয়।
2.অজৈব রাসায়নিক পদার্থের জন্য যে যে রোগ হয় সেগুলি হল –
- পারদের বিষক্রিয়া থেকে মিনামাটা রোগ হয় যা স্নায়ুতন্ত্রের রোগ ,নিয়ন্ত্রণক্ষমতার ও মানসিক এবং হাত, পা ও ঠোঁটের প্যারালাইসিস।
- সীসার বিষক্রিয়া থেকে রক্তাল্পতা, মাথার কোষক্ষতিগ্রস্থ, গর্ভপাত, শিশুদের বুদ্ধি লোপ ইত্যাদি হয়।
- ক্যাডমিয়াম এর বিক্রিয়ায় উৎপন্ন যৌগ হারের সন্ধি স্থলে যন্ত্রনা, রক্তচাপ বৃদ্ধি ও ফুসফুসের রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
- আর্সেনিক থেকে ব্ল্যাক ফুট ডিজিজ রোগ দেখা যায় যার ফলে হাত, পায়ে ছোপ ছোপ দাগ, ফুসফুস ও ত্বকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।
- নাইট্রেট ও নাইট্রাইট শরীরে বেশি মাত্রায় প্রবেশ করলে গর্ভবস্থায় শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে এছাড়া যকৃৎের অন্তরে ক্যান্সার হয়।
3.Eutrification-
- জল দূষণ জনিত কারণে জলাশয়ে অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান সৃষ্টির মাধ্যমে Plankton এর সংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটে ফলে জলের গুণমানের ঘাটতি দেখা যায় এই ঘটনাকে ইউট্রিফিকেশন বলে। এর ফলে জীবজগতে যেসব প্রভাব দেখা যায় তা হল- জলে ফাইটোপ্লাংটন এ দ্রুত বৃদ্ধি পায় ,দ্রুত প্রজনন ও বৃদ্ধি ঘটে ও জলাশয়ে তার ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় এই ঘটনাকে আলগাল ব্লুম বলে। প্রকৃতি অনুযায়ী জলাশয় বর্ণময় হয়ে ওঠে কখনও বর্ণ সবুজাভ বা লাল ও কটু গন্ধ যুক্ত হয় । এছাড়া জলের স্বচ্ছতা কমে যায়, অতিরিক্ত শৈবাল এর মৃত্যুর পরে জীবাণু দ্বারা বিয়োজন মাত্রা বৃদ্ধি পায় বলে জলের সমস্ত অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। অক্সিজেনের ঘাটতির ফলে জলাশয়ের মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। বিভিন্ন শৈবাল ক্ষতিকারক টক্সিন যেমন-Hepatotoxin উৎপাদন করে ।এই টক্সিন গুলি প্রাণী, মাছ , ঝিনুক ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়।
4.কৃষি ক্ষেত্রের প্রভাব-
- দূষিত জল সেচের কাজে ব্যবহার করলে অনেক উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু ধ্বংস হয়। মাটিতে ক্ষারের পরিমাণ বাড়ে ও মাটি অনুর্বর হয়ে ওঠে। বৃষ্টির ফলে মাটিতে অম্লতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। দূষিত জল পোকা-মাকড়, মাছ ইত্যাদি খেলে পাখিদের ক্ষতি হয, সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষতি হয়। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে থাকে।
Water Pollution নিয়ন্ত্রণের উপায়-
আইন প্রণয়ন ও বলবৎ -
- জল ( Prevention and pollution) আইন 1974-1998 (সংশোধিত) ও জল (Prevention and pollution) ১৯৭৭-১৯৯১(সংশোধিত) জল দুষণ আইন প্রয়োগ করে দূষণকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে জল দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
- দূষিত জল পরিশোধন করতে হবে। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ Plant বসিয়ে কল-কারখানা, হাসপাতাল, পৌরসংস্থা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত দূষিত জল কে পরিশোধন করার পর নদ নদী বা সমুদ্রে নিষ্কাশন করতে হবে।গৃহস্থলী ও পৌর আবর্জনাকে প্লান্টে জীবাণুমুক্ত করলে জল দূষিত হয় না।
কাপড় কাচা, সাবান মাখা ও স্নান-
- জল এর সঠিক ব্যবহার করতে হবে , কড়া ক্ষারের পরিবর্তে অল্প ও মৃদু ক্ষার যুক্ত ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় কাচলে পুকুর , জলাশয়, নদ-নদীতে কম দূষণ হয়।গবাদি পশুর স্নান, প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ করলে জল দূষণ কম হয়।
উষ্ণ জল শীতলীকরণ -
- বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পারমাণবিক কেন্দ্র এবং লৌহ ইস্পাত শিল্প থেকে যে অত্যাধিক উষ্ণ জল নির্গত হয় তা সমুদ্রে জলাশয় নদ-নদীতে পরে ও জল দূষণ ঘটায় ।তাই জলকে ঠাণ্ডা করতে হবে যাতে জলের ভৌত ধর্মের কোন পরিবর্তন না হয় ফলে জল দূষণ কম হয়।
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার -
- আধুনিক কৃষি পদ্ধতির জন্য কৃষি জমির জল দূষণের প্রধান উৎস রাসায়নিক সার ,কীটনাশকের ও আগাছা নাশক ঔষধের ব্যবহার কমাতে হবে। কৃষি জমির অবাঞ্ছিত দ্রব্যগুলি যাতে জলে কম মিশতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।
তো বন্ধুরা আজ আমরা জলদূষণ সর্ম্পকে জানতে পারলাম, কি কি কারণে জলদূষণ হয় সেটাও জানতে পারলাম এবং এর প্রতিরোধ সর্ম্পকেও বিশেষ ধারণা পেলাম। এই Postটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে Share & Comment করে জানাবেন কেমন লেগেছে।
-ধন্যবাদ