হরপ্পা সভ্যতার সমাজ ব্যবস্থা
![](https://encrypted-tbn0.gstatic.com/images?q=tbn:ANd9GcRp0q7O6zxPZLXNv2MVYO1Z4Z0nCUjPm2_a-w&s)
হরপ্পা সভ্যতার সমাজ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং শ্রেণিবদ্ধ। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা এবং নিদর্শন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে হরপ্পা সভ্যতার সমাজ ব্যবস্থার কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
1. শ্রেণিবদ্ধ সমাজ
হরপ্পা সভ্যতার সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি বা গোষ্ঠীর মানুষ বাস করত। যদিও সরাসরি লিখিত নথি পাওয়া যায়নি, তবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং শহরের বিন্যাস থেকে এই শ্রেণিবিভাগ বোঝা যায়:
- শাসক ও প্রশাসকগণ: হরপ্পার নগর পরিকল্পনা, বৃহৎ ভবন, এবং সীলমোহরের ব্যবহার থেকে বোঝা যায় যে, সমাজে শাসক ও প্রশাসকগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
- ব্যবসায়ী ও কারিগর: হরপ্পার ব্যবসায়ীরা এবং কারিগররা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। তাদের বানানো মৃৎশিল্প, ধাতব দ্রব্য এবং অন্যান্য হস্তশিল্পের নিদর্শন পাওয়া গেছে।
- কৃষক ও শ্রমিক: হরপ্পার সমাজের বড় অংশ কৃষিকাজে এবং নির্মাণকাজে নিযুক্ত ছিল। শস্যাগার এবং অন্যান্য কৃষি সম্পর্কিত নিদর্শন থেকে বোঝা যায় যে, কৃষিকাজ ছিল তাদের প্রধান জীবিকা।
- ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ: বিভিন্ন পূজাস্থল, ধর্মীয় প্রতীক এবং মূর্তি থেকে বোঝা যায় যে, পুরোহিত এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
2. উন্নত নগর পরিকল্পনা ও অবকাঠামো
- গ্রিড প্যাটার্নে সড়ক ব্যবস্থা: হরপ্পার শহরগুলি পরিকল্পিতভাবে নির্মিত ছিল। সড়কগুলি গ্রিড প্যাটার্নে বিন্যস্ত ছিল, যা নগর পরিকল্পনার উন্নততাকে নির্দেশ করে।
- নিকাশী ব্যবস্থা: প্রতিটি বাড়ির সাথে সংযুক্ত নিকাশী ব্যবস্থা ছিল। বড় বড় ড্রেন এবং ম্যানহোল পাওয়া গেছে, যা উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নির্দেশ করে।
- পানির সরবরাহ: শহরে পাবলিক ও প্রাইভেট স্নানের স্থান এবং কুয়ো ছিল, যা পরিষ্কার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করত।
3. শিল্প ও বাণিজ্য
- হস্তশিল্প: হরপ্পার মানুষ মৃৎশিল্প, ধাতব কাজ, এবং অন্যান্য হস্তশিল্পে পারদর্শী ছিল। তাদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া গেছে।
- বাণিজ্য: হরপ্পার ব্যবসায়ীরা মেসোপটেমিয়া এবং পারস্য উপসাগরের অঞ্চলের সাথে বাণিজ্য করত। তাদের সীলমোহর এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক নিদর্শন পাওয়া গেছে।
4. ধর্ম ও সংস্কৃতি
- ধর্মীয় স্থান ও প্রতীক: বিভিন্ন মন্দির, পূজাস্থল, এবং ধর্মীয় প্রতীক পাওয়া গেছে, যা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও বিশ্বাস নির্দেশ করে।
- মৃত্যু ও সমাহিতকরণ: হরপ্পার সমাজে সমাহিতকরণ প্রথা ছিল। বিভিন্ন সমাধিস্থল থেকে মৃতদেহের সাথে বিভিন্ন জিনিসপত্র পাওয়া গেছে, যা তাদের পরকালীন জীবনের ধারণা এবং বিশ্বাস নির্দেশ করে।
5. লিখনপদ্ধতি ও সীলমোহর
- লিপি: হরপ্পার লিপি এখনও পুরোপুরি ডিকোড করা যায়নি, তবে এটি নির্দেশ করে যে, তারা লিখিত যোগাযোগ ব্যবস্থায় পারদর্শী ছিল।
- সীলমোহর: ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সীলমোহর ব্যবহার করা হতো, যা পণ্য এবং সেবার পরিচিতি এবং গুণমান নিশ্চিত করত।
এই বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে বোঝা যায় যে, হরপ্পা সভ্যতার সমাজ ব্যবস্থা ছিল সুসংগঠিত, উন্নত, এবং শ্রেণিবদ্ধ। তাদের নগর পরিকল্পনা, বাণিজ্য, কৃষিকাজ, ধর্মীয় কার্যক্রম এবং সামাজিক কাঠামো প্রাচীন বিশ্বের একটি উন্নত সমাজের প্রতিফলন দেয়।
-ধন্যবাদ