মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী
সংবিধান অনুযায়ী, বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা বা নেত্রীকে রাজ্যপাল মুখ্যমুন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। অবশ্য রাজ্য বিধানসভায় কোনো দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের ব্যপারে রাজ্যপাল তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।
১) রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতাঃ সংবিধানের ১৬৩(১) নং ধারা অনুসারে, মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রীসভা শাসনকার্য পরিচালনায় রাজ্যপালকে সাহায্য করতে ও পরামর্শ দিতে পারে। মন্ত্রীসভায় গৃহিত যাবতীয় সিদ্ধান্ত ও আইন-সংক্রান্ত প্রস্তাব সম্বদ্ধে রাজ্যপালকে অবহিত করার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। রাজ্যপাল এসব ব্যাপারে কোনো তথ্য জানতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রী তা জানিয়ে থাকেন।
২) রাজ্য বিধানসভার নেতাঃ রাজ্য বিধানসভার নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা গুরুপ্তপূর্ণ। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই ভুমিকা পালন করেন। বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান করা, স্থগিত রাখা, প্রয়োজনে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য রাজ্যপালকে পরামর্শ দিতে পারেন তিনি। বিধানসভায় সরকার নীতি উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রীদের সাহায্য করেত পারেন। গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি বিধানসভায় পাস করানোর দায়িত্বও মুখ্যমন্ত্রীর। সংসদীয় রীতি অনুযায়ী, বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখেন।
৩) রাজ্য মন্ত্রীসভার নেতাঃ রাজ্য মন্ত্রীসভায় মুখ্যমন্ত্রীর স্থান সবার উপরে। মন্ত্রীসভায় তিনি সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ। সংবিধানের ১৬৩(১) নং ধারা অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদের নেতা। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্যপাল মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়োগ করেন এবং প্রয়োজন হলে পদচ্যুত করতে পারেন। মন্ত্রীদের মধ্যে দফতর বন্টন এবং পুনর্বন্টন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি দপ্তরের কাজকর্ম যাতে সুষ্ঠভাবে পরিচালিত হয় সেদিকে তিনি দৃষ্টি রাখেন। মন্ত্রীসভার বৈঠক তিনি আহ্ববান করেন এবং সভায় সভাপতিত্ব করে থাকেন।
৪) সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতাঃ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতাও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। রাজ্য আইনসভার ভিতরে এবং বাইরে দল বা জোটকে সঠিক নেতৃত্বে দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর। দলের বা জোটের নীতি ও কর্মসূচী মুখ্যমন্ত্রী সরকারি নীতির মাধ্যমে রূপায়ন করেন। দলের বা জোটের ভাবমূর্তি মুখ্যমন্ত্রীর কাজকর্মের ওপর নির্ভরশীল। দলের বা জোটের শৃঙ্খলা ও সংহতি রক্ষায় তিনি সদা সতর্ক থাকেন।
৫) জনমতের সংগঠকঃ জনসংযোগ রক্ষা মুখ্যমন্ত্রীর একটি গ্রুরুপ্তপূর্ণ কাজ। রাজ্যের বিভিন্ন জনপ্রিয় উৎসব-অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ দেন। এ ছাড়া বেতার, দূরদর্শন, সংবাদপত্র, জনসভা ইত্যাদির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের নানানরকম সমস্যা ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দল বা জোটের সপক্ষে শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা
ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অঙ্গরাজ্যগুলির প্রশাসনে মুখ্যমন্ত্রীর পদটি স্বতন্ত্র গুরুপ্ত রয়েছে। রাজ্যের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীকে প্রকৃত শাসক হিসেবে অভিহিত করা হয়, কারণ তাঁর নেতৃত্বেই রাজ্য প্রশাসন পরিচালিত হয়। তবে কেন্দ্রের মতো রাজ্যগুলিতে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা থাকলেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রীর মতো প্রবল ক্ষমতার অধিকারী নন। কেন্দ্রের সংসদীয় শাসনব্যবস্থার সঙ্গে রাজ্যের সংসদীয় কাঠামোর পার্থক্যের প্রধান কারণ রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। রাষ্ট্রপতির কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা নেই। রাজ্যপালের এই ক্ষমতা প্রয়োগকে আদালতের এক্তিয়ারের বাইরে রাখা হয়েছে। তবে কেন্দ্রে এবং রাজ্যে একই রাজনৈতিক দল সরকারি ক্ষমতায় আসীন থাকলে রাজ্যপাল নেহাতই নিয়মতান্ত্রিক শাসকের ভূমিকা পালন করে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের দলীয় সমর্থন ও সহযোগিতা এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও দক্ষতা, ক্যাবিনেটের সহযোগিতা প্রভৃতির ওপর মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা নির্ভরশীল।