হাইকোর্টের গঠন
সংবিধানের ২১৮ নং ধারায় বলা হয়েছে, ভারতের প্রত্যেক রাজ্যে একটি করে হাইকোর্ট বা মহাধর্মাধিকরণ থাকবে। তবে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করে দুই বা ততোধিক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য মাত্র একটি হাইকোর্ট গঠন করতে পারে। ভারতের বর্তমানে ২৯ টি রাজ্যে মোট ২১ টি হাইকোর্ট রয়েছে।। সংবিধানের ২১৬ নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি হাইকোর্ট একজন প্রধান বিচারপতি ও কয়েকজন অন্যান্য বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত হবে। অন্যান্য বিচারপতিদের সংখ্যা রাষ্ট্রপতির রয়েছে।
হাইকোর্টের বিচারপতিরা বর্তমানে ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত পদে আসীন থাকতে পারেন।
হাইকোর্টের ক্ষমতা কার্যাবলি
হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে-
- মূল এলাকা- সম্পর্কিত ক্ষমতাঃ রাজ্যস্ব-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় হাইকোর্টের মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত। অনেক ক্ষেত্রে দেওয়ানি মামলাকেও মূল এলাকাভুক্ত করা যায়। তবে সব হাইকোর্টের মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা নেই। শুধুমাত্র কলকাতা, চেন্নাই ও মুম্বাই হাইকোর্টের এই ক্ষমতা রয়েছে।
- আপিল এলাকা- সম্পর্কিত ক্ষমতাঃ রাজ্যের সর্বোচ্চ আপিল আদালত হল হাইকোর্ট। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে জেলা জজ ও অধস্তন জেলা জজের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়।
- অন্যদিকে ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত দায়রা জজ কোনো ব্যক্তিকে সাত বছরের অধিক কারাদন্ড দিলে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়।
- লেখ জারির ক্ষমতাঃ সুপ্রিমকোর্টের মতো হাইকোর্ট গুলিও নিজ নিজ এলাকায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য বন্দী-প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকারপৃচ্ছা, উৎপ্রেষণ প্রভৃতি লেখ, নির্দেশ ও আদেশ জারি করতে পারে [২২৬(১) নং ধারা] ।
- সাংবিধানিক বৈধতা বিচারের ক্ষমতাঃ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করার ক্ষমতাও হাইকোর্টের হাতে রয়েছে। এক্ষেত্রে অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে প্রণীত যে-কোনো আইনকে হাইকোর্ট অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে।
- তত্ত্বাবধান-সম্পর্কিত ক্ষমতাঃ সংবিধানের ২৭৭ নং ধারা অনুযায়ী সামরিক আদালত ও সামরিক ট্রাইবুন্যাল ছাড়া নিজ এলাকাভুক্ত অন্য সব আদালত ও ট্রাইবুন্যালগুলির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব হাইকোর্টকে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অধস্তন আদালতগুলিকে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র দাখিল করার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতাও হাইকোর্টের রয়েছে।
- মামলা অধিগ্রহণের ক্ষমতাঃ সংবিধানের ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত গুরুপ্তপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে এমন কোনো মামলা নিম্ন আদালত থেকে নিজের হাতে নেওয়ার ক্ষমতা হাইকোর্টকে দেওয়া হয়েছে (২২৮ নং ধারা) ।
- নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাঃ অধস্তন আদালত গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হাইকোর্টের রয়েছে। জেলা আদালত ও অন্যান্য অধস্তন আদালতের বিচারপতি, কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নিত ইত্যাদি বিষয়ে হাইকোর্ট গুরুপ্তপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
- অন্যান্য ক্ষমতাঃ ক) হাইকোর্ট নিজের অবমাননার জন্য অবমাননাকারীকে শাস্তি দিতে পারে। খ) হাইকোর্ট বিচারকার্য সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম কানুন নিজে তৈরি করতে পারে। গ) হাইকোর্ট অভিলেক আদালত হিসেবে (Court of Records) কাজ করতে পারে।
উপসংহার
অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে হাইকোর্টের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ । তবে হাইকোর্টের গঠন ও ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এই আদালত প্রকৃত অর্থেই সর্বভারতীয় বিচারব্যবস্থার একটি অঙ্গ। তা ছাড়া হাইকোর্টের যে-কোনো সিদ্ধান্ত সুপ্রিমকোর্ট বাতিল করে দিতে পারে এবং সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশিত বিধিবিধান অনুসরণ করা হাইকোর্টের পক্ষে বাধ্যতামূলক।