জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলি
সাধারণ সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়-
1) আলোচনা ও সুপারিশ:
- জাতিপুঞ্জের সনদে সাধারণ সভাকে সনদ অন্তর্ভুক্ত যে-কোনো বিষয়ে আলোচনা ও প্রস্তাব গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আজ পর্যন্ত সাধারণ সভা যেসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গ্রহণ করেছে সেগুলি হল- বর্ণবিদ্বেষ প্রথার উচ্ছেদসাধন, মানবাধিকার রক্ষা, নিরস্ত্রীকরণ, নয়া আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা, ঔপনিবেশিকতার অবসান, পরমাণু অস্ত্রের প্রসাররোধ প্রভৃতি।
2) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা:
- আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে জাতিপুঞ্জের কোনো সদস্য অথবা নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক উত্থাপিত যে-কোনো প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করার অধিকার সাধারণ সভার রয়েছে [১১(২) নং ধারা]। জাতিপুঞ্জের সদস্য নয় এমন কোনো রাষ্ট্রও সাধারণ সভার কাছে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে [৩৫(২) নং ধারা]। সাধারণ সভা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নকারী কোনো পরিস্থিতির প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে [১১(৩) নং ধারা]।
3) নিরস্ত্রীকরণ-সম্পর্কিত কাজ:
- জাতিপুঞ্জের সনদ অনুসারে শান্তির স্বার্থে নিরস্ত্রীকরণ ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের গুরুদায়িত্ব রয়েছে সাধারণ সভার। সভা তার সুপারিশ সদস্যবৃন্দকে অথবা নিরাপত্তা পরিষদকে জানাতে পারে।
4) আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন:
- আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন ও নথিভুক্তিকরণের জন্য আলোচনা ও সুপারিশ করার ক্ষমতা সাধারণ সভার হাতে দেওয়া হয়েছে।
5) তত্ত্বাবধান:
- সনদের ১৫(১) নং ধারা অনুসারে, নিরাপত্তা পরিষদের বাৎসরিক ও বিশেষ রিপোর্ট সাধারণ সভা গ্রহণ করে থাকে। রিপোর্ট পর্যালোচনা করার ক্ষমতাও সাধারণ সভার রয়েছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ। অছিপরিষদসহ অন্য সংস্থাপুলির পেশ করা প্রতিবেদন গ্রহন ও পর্যালোচনা সাধারণ সভা করে থাকে।
6) নির্বাচন:
- নিরাপত্তা পরিষদের দশজন অস্থায়ী সদস্যকে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ৫৪ জন সদস্যকে সাধারণ সভা নির্বাচন করে থাকে। আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের ১৫ জন বিচারপতির নির্বাচনে নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে সাধারণ সভাও অংশগ্রহণ করে। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ সভা জাতিপুঞ্জের মহাসচিবকে নির্বাচন করে থাকে। এ ছাড়া জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন অস্থায়ী কমিশনের সদস্যদের নির্বাচন করার অধিকার সাধারণ সভার রয়েছে।
7) আর্থিক দায়িত্ব পালন:
- জাতিপুঞ্জের বাজেট প্রণয়ন এবং অনুমোদনের ক্ষমতা সাধারণ সভাকে প্রদান করা হয়েছে (১৭ নং ধারা)। প্রত্যেক সদস্যরাষ্ট্রকে এই সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত হারে আর্থিক ব্যয়ভার বহন করতে হয়। জাতিপুঞ্জের বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির আর্থিক ও বাজেট সম্পর্কিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ করার ক্ষমতা সাধারণ সভার রয়েছে।
৪) সনদ সংশোধন:
- সাধারণ সভা জাতিপুঞ্জের সনদ সংশোধন করার ক্ষমতার অধিকারী। সনদ সংশোধনী প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতিক্রমে সাধারণ সভায় উপস্থিত ও ভেটিদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে কার্যকরী হয়। প্রসঙ্গত, নিরাপত্তা পরিষদের সম্মতির অর্থ হল ৫ জন স্থায়ী সদস্যসহ অন্তত ৯ জন সদস্যের সমর্থন। পরিষদের পাঁচ সা গেটি ব্রিটেন, ফ্রান্স জাতিপুঞ্জের অধিবেশন যে কে পরিষদের প্রতেছ ইয়র্কে সবসময় নিরাপত্তা
9) অন্যান্য ক্ষমতা:
- সাধারণ সভার আরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। যেমন-① সাধারণ সভা জাতিপুঞ্জের কাজকর্মকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সহযোগী সংস্থা পঠন করতে পারে। ② নতুন সদস্যভুক্তি ও বর্তমান কোনো সদস্যকে বহিষ্কার করার বিষয়েও সাধারণ সভাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ও আন্তর্জাতিক অছি-ব্যবস্থা পরিচালনার বিষয়ে সাধারণ সভাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ④ বিশ্ব মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব সাধারণ সভার হাতে অর্পণ করা হয়েছে। ১৯৪৮ সালে সর্বজনীন মানবিক অধিকার-সংক্রান্ত ঘোষণা, জাতিগত বৈষম্য উচ্ছেদ, নারীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণ, শিশুদের অধিকার সম্পর্কে প্রস্তাব গ্রহণ, 'জেনোসাইড' সংক্রান্ত কনভেনশন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাধারণ সভা উল্লেখযোগ্য
-ধন্যবাদ