গ্রাম বাংলার এই পবিত্র ভূমিতে জন্ম নিয়েছেন অনেক মহাপুরুষ এবং এই রকমই একজন মহান বাঙালি যোগসাধক ও ধর্মগুরু ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমায় অবস্থিত কামারপুকুর গ্রামে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জীবনী ও তাঁর অমৃত কথা গুলি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চলেছি।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শৈশব জীবন:
18ই ফেব্রুয়ারি 1836 সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার অন্তর্গত আরামবাগ মহকুমায় অবস্থিত কামারপুকুর নামক ছোট্ট একটি গ্রামের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। তিনি তাঁর পিতা ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা চন্দ্রমণি দেবীর চতুর্থ এবং শেষ সন্তান ছিলেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জন্মের আগে থেকেই তাঁর মাতা পিতা বিভিন্ন ধরণের অলৌকিক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। রামকৃষ্ণ দেবের জন্মের কিছুদিন আগেই গদাধর বিষ্ণু রামকৃষ্ণ দেবের পিতকে স্বপ্নে দর্শন দিয়েছিলেন এবং এই করণের জন্যই রামকৃষ্ণ দেবের মাতা পিতা তাঁকে গদাধর নাম দিয়েছিলেন। গ্রাম বাসীরা তাঁকে ভালোবেসে গদাই বলে ডাকতেন। ছোটবেলা থেকেই হিন্দু দেব দেবী, রামায়ণ, মহাভারত এবং পুরাণের প্রতি তাঁর বিশেষ আকর্ষণ ছিল।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শিক্ষা:
ছোট বেলা থেকেই ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেব পাঠশালার তথা কথিত পড়াশোনা কে পছন্দ করতেন না। তবে তিনি গানবাজনা, কথকতা ও যাত্রা অভিনয়ে পারদর্শি ছিলেন।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের পিতৃবিয়োগ:
মাত্র 7 বছর বয়সে 1843 সালে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব তাঁর বাবাকে হারান। এর পরে পরিবারের দায়িত্ব চলে আসে তাঁর বড় ভাই রামকুমার চট্টোপাধ্যাযয়ের উপর। তিনি পরিবারের আর্থিক সংকট দেখে কলকাতায় চলে আসেন। এবং রামকৃষ্ণ দেব গ্রামে তাঁর মায়ের কাছে থেকে ঘরের কাজ ও গৃহদেবতার পূজাপাঠ করতে শুরু করেন।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে পৌরোহিত্য:
দাদাকে কলকাতায় পৌরোহিত্যে সাহায্য করার জন্য রামকৃষ্ণ দেব 1852 খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় চলে আসেন। রামকৃষ্ণ দেবের কলকাতায় আসার কয়েক বছর পরেই এক প্রসিদ্ধ জমিদার পত্নী রানি রাসমণি দক্ষিণেশ্বর একটি কালীমন্দির স্থাপন করেন এবং এই মন্দিরের পৌরোহিত্যের দায়িত্ব দেওয়া হয় শ্রী রামকৃষ্ণের দাদা রামকুমার কে। দাদা রামকুমারের সাথে শ্রী রামকৃষ্ণ দেবও এই মন্দিরে পৌরোহিত্য শুরু করেন দেন। বছর খানেক পর রামকুমার মারা যান এবং কালীবাড়ির পৌরোহিত্যের দায়িত্ব চলে আসে শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের ওপর। তিনি এই মন্দিরে বেশিরভাগ সময়ই মা কালীর সাধনাতে মেতে থাকতেন।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মা কালীর দর্শন:
দাদা মারা যাওয়ার পর তিনি মা কালীর দর্শন পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। মা কালীর দর্শন না পেয়ে মাঝেসাঝে তিনি কেঁদেও উঠতেন। একদিন ব্যাকুলতার চোটে তিনি তাঁর জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ঠিক সেই মুহূর্তেই মা কালী স্বয়ম আবির্ভূত হয়ে তাঁকে দর্শন দিয়েছিলেন।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বিবাহ:
স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে রামকৃষ্ণ দেবকে ফিরিয়ে আনার জন্য তাঁর মা তাঁর বিবাহ দেওয়ার চিন্তা ধারা নিতে শুরু করেন। এবং 23 বছর বয়সে রামকৃষ্ণ দেবের সাথে পঞ্চমবর্ষীয়া বালিকা সারদার বিয়ে দেওয়া হয়। তবে রামকৃষ্ণ দেব এক বছর পরেই আবার কলকাতায় এসে মা কালীর আরাধনায় মেতে ওঠেন।
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শেষ জীবন ও মৃত্যু:
১৮৮৫ সালে তিনি গলার ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে যান এবং তাঁকে কাশীপুরের এক বিরাট বাগানবাড়িতে স্থানান্তরিত করা হয়। এখানে তাঁর শিষ্যরা তাঁর দেখাশোনা করতেন। বাগানবাড়িতে থাকার কয়েক মাস পর 1886 সালের 16ই আগস্ট তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান।
-ধন্যবাদ