ইন্টারনেটের ইতিহাস (History of Internet)
ইন্টারনেট ব্যবস্থার উদ্ভাবক হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর। সামরিক আক্রমণের ঘটনার ক্ষেত্রে কম্পিউটারের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুরক্ষিত করাই ছিল এই ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর তাদের সেই নেটওয়ার্কের নামকরন করেছিল আর্পানেট (ARPANET), যার পুরো নাম অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি নেটওইয়ার্ক (Advanced Research Project Agency Network), যা গঠিত হয় 1969 সালে। এই সময় ইরাকের বিরুদ্ধে উপসাগরীয় যুদ্ধ চলছিল। সেই সময়(1960 সালে) রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সর্বদা ঠান্ডা লড়াই লেগেই থাকতো। সেই যুদ্ধের খবর ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়ে জনসাধারণের মধ্যে এক ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এর পর ইন্টারনেটের প্রসার ঘটতে আর একটুও সময় লাগেনি। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর তাদের দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গবেষণার কাজে যুক্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যেই এই নেটওইয়ার্ক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। পরবর্তীকালে তারা আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে এই নেটওইয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অনুমোদন দিয়েছিল, যাতে তারাও এই নেটওইয়ার্কের সুবিধা ভোগ করতে পারে। প্রথমদিকে শুধুমাত্র পেশাগত ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হলেও, কিছুদিন পর থেকেই ইন্টারনেট আস্তে আস্তে ঢুকে যায় গৃহস্থের অন্তঃপুরে। 1993 খ্রিস্টাব্দে ইন্টারনেটকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর কয়েক মাসের মধ্যেই হাজার হাজার নতুন সদস্য ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয়। এইখান থেকেই শুরু হয়ে যায় পৃথিবীর ইতিহাসে ইন্টারনেটের জয়যাত্রা। বর্তমানের ইন্টারনেট হল তারই পরিণতি।
ইন্টারনেটের ব্যবহার ( Use Of Internet)
ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে যতই বলা হোক না কেন, তা এর বাস্তবের ব্যবহারিক রুপের তুলনায় অতি সামান্যই বলা হবে। দৈনন্দিন জীবনে সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসাধারণের মধ্যে আবির্ভাবের শুরুতে প্রথম প্রথম বিশেষত তথ্যের আদান-প্রদান করার জন্য ইন্টারনেটের ব্যাবহার হত। এর ফলে সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপর দিন যত এগিয়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের বহুমুখিতা বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপকভাবে। আজ পৃথিবীতে ইন্টারনেটের ব্যবহার এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যে একে মানুষের বেঁচে থাকার এক অন্যতম প্রয়োজন হিসেবে গণ্য করার সময় হয়েছে বলে অনেক সমাজ বিশেষজ্ঞ মনে করেন। আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে শিক্ষা, ব্যাবসা, যোগাযোগ, ব্যাঙ্কিং, চিকিৎসা সব ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের একান্ত প্রয়োজনীয়তা আজ বিদ্যমান। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবস্থা মাত্র এক মিনিটের জন্য বন্ধ হলে পৃথিবীকে যে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তা কল্পনাতীত। বর্তমান সময়ে সমাজে এই সকল ক্ষেত্রে Internet-এর ব্যবহার দেখা যায়।
ইন্টারনেট ব্যাবসা বাণিজ্যকে দিয়েছে এক নতুন দিশা। ব্যাবসা এখন অনলাইনে। বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। যেমন-
বরর্তমান প্রজন্মে যদি এটি একটি ভাল উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে তবে ইন্টারনেট খুবই উপকারী। বরর্তমান সময়ে মানুষ ইন্টারনেট থেকে ঘরে বসে সমস্ত কিছু পেয়ে যাচ্ছে। অনলাইন শপিং, অনলাইন চ্যাটিং, অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইন গাড়ি বুকিং ইত্যাদি ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে কোনও সময় যে কোনও কিছু অর্জন করা যায়। দূরত্বের শিক্ষা ইন্টারনেটের বড় সুবিধা হ’ল, গ্রামাঞ্চলে যেখানে শিক্ষক পাওয়া যায় না সেখানে ইন্টারনেট শিক্ষা ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্রামের শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিখতে পারে যে তারা অনলাইন পরীক্ষা দেয়। গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা পৈছানো হচ্ছে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে। আজ সব কিছুই অনলাইনে হয়ে গেছে এমনকি খাওয়ার বাইরেও যাওয়ার দরকার নেই। আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে খাবার অর্ডার করতে পারি। যে কারণে ইন্টারনেটের অনেক সুবিধা রয়েছে।
ইন্টারনেট ব্যবসায়ের নতুন ক্ষেত্রের জন্ম দিয়েছে, যা ইন্টারনেটের কারণে উদ্ভূত হয়েছে। অ্যামাজন , ফ্লিপকার্ট, মিন্ট্রা ব্যবসায়ের কয়েকটি উদাহরণ। যা ইন্টারনেটের সুবিধার ফলাফল। ঐতিহ্যবাহী সিস্টেমগুলি এখন সহজ এবং আরও স্বচ্ছ হয়ে উঠছে। ব্যাংকিং হোক বা ই-রিটার্ন ফাইলিং, সব কাজই এখন অনলাইনে করা হচ্ছে ঘরে বসে। এছাড়াও প্রতিদিন মোবাইল ফোনের উন্নতির সাথে সাথে ইন্টারনেট সব মানুষ এর হাতের মুঠো তে চলে এলো। উন্নত ৪জি বা ৫জি নেটওয়ার্ক আসার পর আজ এককথায় ইন্টারনেট ছাড়া কমিউনিকেশন এর কথা ভাবাই যাই না। ইন্টারনেটে থাকা প্রসিদ্ধ সার্চ ইঞ্জিন গুগল, ইয়াহু এর সাহায্যে আপনি সহজেই আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য একটি ক্লিকের মাধ্যমে পেয়ে যেতে পারেন। তথ্যের এমন সহজলভ্যতা ইন্টারনেট যুগের আগে ভাবা যেত না।
ইন্টারনেটের কিছু অসুবিধাও রয়েছে যা এটি অশুভ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। ইন্টারনেট যেমন মানুষকে প্রথম সুযোগ সুবিধা এনে দিয়েছে তেমনি মানুষকে কিছু অসুবিধা সম্মুখিন হতে হয়েছে ইন্টারনেট আসার পর। হ্যাকিং, শিপিং, ফিশিং, অনুপ্রবেশ, সাইবার ক্রাইম কেবল ইন্টারনেট হারিয়ে যাওয়ার কারণে ঘটছে। ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন অসভ্য বা অর্ধসত্য তথ্য ব্যবহার করতে গিয়ে পাঠক ও গবেষকগন সমস্যার সন্মুখীন হচ্ছে ফলে গবেষণার গুণগত মান কমে যাওয়ার সম্ভাবানা থেকে যায়। মুদ্রিত বইপত্রে যথার্থ লেখকদের সংখ্যাই বেশি। কিন্ত ইন্টারনেটে আজকাল যে কেউ নিজের মনগড়া ভুল তথ্য আপলোড করে থাকে। সারাদিন চোখের সামনে মোবাইল এবং কম্পিউটারের স্ক্রিন দেখে চোখের অনেক রোগ হতে পারে। যারা গভীর রাত অবধি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তারা স্থূলত্বের শিকার হন। ইন্টারনেট নেশা একজন ব্যক্তিকে নষ্ট করে দেয়। আমরা অনেক সময়ই আমরা জেনে না জেনে অনেক লিংকে ক্লিক করে ফেলি , যার ফলে আমাদের কম্পিউটার বা মোবাইলে অনেক সময় ভাইরাস অ্যাটাক দেখা যায় যার ফলে আমাদের কম্পিউটার বা মোবাইলে থাকা তথ্য এটা নষ্ট হয় যায়। এ বিষয়ে ফেসবুকের একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে বর্তমানে ফেসবুক একটি ঘোষণা করেছিল যে ফেসবুকে জমা ৪০০ মিলিয়ন মানুষের ফোন নম্বর এক্সপোজ হয়ে গেছে। ফেইসবুক এর মতো এত বড় কোম্পানি যদি প্রাইভেসী এর ব্যাপারে এতটা উদাসীন হয় তাহলে আমাদের ইন্টারনেট ব্যাবহার এর আগে অনেক সতর্ক থাকা প্রয়োজন বৈকি।