রানী রাসমণির কথা আমরা সবাই জানি। তিনি একদিকে ছিলেন দয়াময়ী এবং অন্যদিকে ছিলেন ঈশ্বরপ্রেমী। তিনি অসহায় মানুষদের জন্য সেবা করতেন এবং মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি তার স্বামীকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। তিনি কালি ভক্ত ছিলেন। তিনি এবং তার স্বামী দরিদ্র মানুষের সেবায় অনেক অবদান রেখে গেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন কলকাতার দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির।
1793 সালে 26 সেপ্টেম্বর উত্তর 24 পরগণার হালিশহরে কোণা গ্রামে রাণী রাসমণির জন্ম হয়। পিতা হরেকৃষ্ণ দাশ এবং মা রাম প্রিয়া দাশি। রানি রাসমণি যখন বয়স মাত্র সাত বছর ছিল তখন তিনি মাকে হারান।
ছোটবেলায় তার মা তার নাম ভালোবেসে রানী রেখেছিলেন এবং তার পাড়ার প্রতিবেশীদের নাম দেয় রানী রাসমণি। মাত্র 11 বছর বয়সে রানী রাসমণি এক বিশাল ধনী জমিদার পরিবারে জমিদার বাবু রাজচন্দ্র দাসের সঙ্গে তার বিবাহ হয়।
তাদের দম্পতি চার কন্যা পদ্মমনি, কুমারী, করুণাময়ী, জগদম্বা। পদ্মমনির স্বামী রামচন্দ্র দাশ, কুমারীর স্বামী প্যারিমোহন চৌধুরী, করুণার বিয়ে হয় মথুরবাবুর সঙ্গে। তবে বিয়ের দুই বছর পরই করুণার মৃত্যু হয় এবং মথুরামোহন বিশ্বাস জগদম্বা বিয়ে করেন।
1836 সালে রাজচন্দ্র দাস মারা যান এবং তারপর থেকে রানী রাসমণি সমস্ত জমিদারীর ভার তুলে নেন নিজের হাতে এবং খুব দক্ষতার সাথে তা পরিচলনা করেন।
রানী রাসমণি ও রাজচন্দ্র দয়ালু প্রকৃতির লোক ছিলেন এবং তারা দরিদ্র, ভিক্ষুক এবং অসহায় মানুষদের সেবা করতেন। তারা দুজনেই বেশিরভাগ সময় সমাজ সেবা, ধর্মীয় স্থানে ব্যয় করতেন। রানী রাসমণি এবং তার স্বামী কলকাতার বাবুঘাট বাঁধাতে সহায়তা করেন এবং আহিরীটোলা স্নানঘাট ও নিমতলা স্নানঘাট তৈরি করেন।
সেই সময়কালীন গঙ্গায় জেলেদের মাছ ধরার জন্য ইরেজ সরকার কর অরোপ করেন। সমস্ত জেলেরা একত্রে রানী রাসমণির কাছে গিয়ে এই খবর জানান এবং রানী রাসমণি এই বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। অবশেষে ইংরেজরা এই কর তুলে নিতে বাধ্য হন।
তখনকার দিন ব্রিটিশ আমল ছিল, তখন ভারতীয়দের দিয়ে নীলচাষ করানো হত। বাংলাদেশের মকিমপুর অঞ্চলের মানুষজনদের ইংরেজরা জোর করে নীলচাষ করানোর জন্য অত্যাচার করত। এই খবর শুনে রানী রাসমণি ছুটে যান এবং তা বন্ধ করান।
আমাদের কলকাতার দক্ষিণেশ্বরে কালী মন্দির তারই তৈরি করা এটা হয়তো আমরা সবাই জানি কিন্তু তার পেছনে আসল রহস্য হল 1889 সালে রানী রাসমণি মন চায় কাশিতে যাবেন এবং সেখানে গিয়ে তিনি মা অন্নপূর্ণা ও বিশ্বনাথের পূজা দেবেন। সেই অনুযায়ী তিনি যাওয়ার তৈরি হল। তবে কাশিতে যাওয়ার আগের দিন রাতে তিনি এক স্বপ্ন দেখেন এবং সেই স্বপ্নে মা ভবতারিণী রানী রাসমণি-কে বলেন ‘তোর কাশি যাওয়ার দরকার নেই তুই গঙ্গার তীরে মন্দির তৈরি করে আমার পূজা দে, আমি এখানেই তোর পূজা গ্রহণ করব’। তাই 1855 সালে 31-শে মে রানী রাসমণি গঙ্গার ধারে প্রতিষ্ঠিত করলে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির।
সাল তখন 1820, বাংলায় দেখা দিল এক ভয়াবহ বন্যা। বন্যার কবলে সাধারণ মানুষ বাড়িঘর, সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল। রানী রাসমণি ছিলেন দয়াময়ী। তাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য তিনি প্রচুর টাকা ব্যয় করেছিলেন।
রানী রাসমণি একজন সাহসী নারী ছিলেন, যিনি যেই কাজ করবে ভাবতেন তা সম্পূর্ণ করে ছাড়তেন তা যতই কঠিন হোক। গরবী, অসহায় মানুষদের প্রতি তার বেদনা, টান এবং সহযোগিতা তাকে চিরস্মরনীয় করে তুলেছে সকলের কাছে।
1861 সালে 19 শে ফেব্রুয়ারি কালীঘাটের বাড়িতে দয়াময়ী রানী রাসমণি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল 68 বছর। তাকে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে, চন্দনকাঠে দাহ করা হয়েছিল। তিনি আজ আমাদের মধ্যে না থাকেলও তার কর্ম আমাদের মধ্যে জীবিত রয়েছে।
রানি রাশমণির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ
-ধন্যবাদ