তির জনক মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন। আজ আমরা মহাত্মা গান্ধীর জীবনী সম্পর্কে জানব। ভারতবর্ষ তথা গোটা বিশ্ব তাকে যে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে এবং তার প্রতি এখনো যে সম্মান প্রদর্শন করে তা না এর পূর্বে কাউকে দেওয়া হয়েছে না ভবিষ্যতে দেওয়া হবে ।
আজ আমরা মহাত্মা গান্ধীর জীবনী সম্পর্কে জানার সাথে সাথে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।
মহাত্মা গান্ধী ছিলেন একজন অন্যতম ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। মহাত্মা গান্ধী ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের অভিমত প্রকাশ করে । এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।
ভারতের কাথিয়াবাড় প্রদেশের পােরবন্দরনামকস্থানে একপ্রাচীন বেনিয়া পরিবারে 1860 খ্রিঃ 2 রা অক্টোবর মােহনদাস করমচ গান্ধী জন্মগ্রহণ করেন ।
মােহনদাসের পূর্বপুরুষগণ বংশানুক্রমে কাথিয়াবাড় প্রদেশের পােরবন্দর নামক স্থানের দেওয়ান ছিলেন ।
গান্ধীজির বাবার নাম করমচাদ । মহাত্মা গান্ধীর ডানাম ছিল কাবা গান্ধী । গুজরাটের সামাজিক নিয়ম হল , ছেলের নামকরণের সময় বাবার নামও তার নামের সঙ্গে জুড়ে দিতে হয় ।
এই নিয়ম অনুসারেই করমচাদের ছেলে মােহনদাসের নামের সঙ্গে তার বাবার নাম জুড়ে নাম রাখা হয়েছিল মােহনদাস করমচাঁদ গান্ধী । গান্ধীজি ছিলেন তার বাবার সর্বকনিষ্ঠ পুত্র ।
গান্ধীজির মাতার নাম পুত্তলীবাঈ । তিনি ছিলেন পরম নিষ্ঠাবতী মহিলা । পুজো আর সূর্য দর্শন না করে তিনি জল গ্রহণ করতেন না ।
বাল্য ও শৈশবের শিক্ষা কাথিয়াবাড়ে সমাপ্ত করেন মােহনদাস । এরপর বিলাতে গিয়ে ব্যারিস্টারি অধ্যয়ন করেন । পরে দেশে ফিরে এসে বােম্বাই হাইকোর্টে আইনব্যবসা আরম্ভ করেন ।
গান্ধীজি সত্য ও সাহসের মন্ত্র পেয়েছিলেন তার বাবার কাছ থেকে । মায়ের কাছ থেকে পেয়েছিলেন উপবাস ও কঠোর ব্রত পালনের শিক্ষা ।
শৈশবকাল থেকেই মহাত্মা গান্ধী মিথ্যা কথা বলা , চুরি করা । ইত্যাদিকে পাপকর্ম বলে মনে করতেন । এই কারণেই মহাত্মা গান্ধী সত্যাশ্রয়ী হয়ে উঠেছিলেন ।
মাত্র তেরাে বছর পার হতেই মহাত্মা গান্ধীকে বিয়ে দেওয়া হয় কস্তুরি বাঈ নামে এক সমবয়সী কিশােরীর সঙ্গে । যােলাে বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধী প্রথম সন্তানের পিতা হন সেইসাথে আপন পিতাকে হারান ।
18 বছর বয়সে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন । উচ্চশিক্ষার জন্য বড়ভাই মহাত্মা গান্ধীকে বিলেতে পাঠাতে চাইলেন ব্যারিস্টারী পড়ার জন্য । তখনকার দিনে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভারতীয় হিন্দু সমাজে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া ছিলাে ঘােরতর পাপের কাজ । এই জন্য রাজকোটের অনেক সমাজপতি বড়ভাইকে এবং তাদের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার হুমকি দিলেন । কিন্তু গান্ধী নিজে ব্যারিস্টারী পড়ার জন্য ছিলেন খুবই আগ্রহী । তাই মা পুতলি বাঈ কিছুটা গররাজী হলেও ছেলের মঙ্গল প্রত্যাশায় তাকে বিলেতে যেতে অনুমতি দিলেন ।
1888 সালের 4 ঠা সেপ্টেম্বর মহাত্মা গান্ধী বিলাতগামী জাহাজে চড়ে বসলেন ।
1891 সালে মহাত্মা গান্ধী ব্যারিস্টারী পাস করে দেশে ফিরে এলেন এসে শুনলেন মা মারা গেছেন । কিছুদিন পরে মহাত্মা গান্ধী আইন ব্যবসা শুরু করলেন । কিন্তু মহাত্মা গান্ধী অনেকটা লাজুক প্রকৃতির ছিলেন । প্রথম দিকে আইন – ব্যবসায়ে তেমন জুত করতে পারলেন না।
1893 খ্রিঃ দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের একটি জটিল মামলার প্রয়ােজনে মহাত্মা গান্ধী নেটাল যাত্রা করেন । পরে সেখান থেকে ট্রান্সভাল যাত্রা করেন।
1898 খ্রিঃ মােহনদাস মুষ্টিমেয় ভারতীয়দের নিয়ে নেটাল ইণ্ডিয়ান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন । এই সময় নেটাল সরকার এশিয়াটিক এক্সক্লশন অ্যাক্ট অর্থাৎ এশিয়াবাসী বিতাড়ন নামক একটি আইন পাস করেন । মােহনদাস এই আইনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের ধন্যবাদভাজন হন ।
নেটাল ও ট্রান্সভালে ভারতীয়দের দুরবস্থার বিষয় সাধারণকে এবং সরকারকে জানাতে 1895 খ্রিঃ মােহনদাস ভারতে আসেন।
বৃটিশদের অপশাসন ও অত্যাচার – নির্যাতনের বিরুদ্ধে 1950 সালের সেপ্টেম্বর মাসের কলকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ শিলেশন গান্ধীজীর অসহযােগ আন্দোলন এবং একই সঙ্গে ভারতের পাতা লাভের প্রস্তাব গৃহীত হয় ।
আন্দোলন ক্রমশঃ প্রবল হয়ে উঠতে থাকে । মহাত্মা গান্ধী 1989 , সালে বৃটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়াে ‘ আন্দোলন গড়ে তােলেন । মহাত্মা গান্ধী কারারুদ্ধও হন বহুবার।
এদিকে মুসলিমদের নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ , মুসলিম । সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার জন্য ভারত ভাগ করে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে সােচ্চার হয়ে ওঠেন । 1985 সালে দ্বিতীয় বিশযুদ্ধ শেষ হলে বৃটিশরা ভারতের স্বাধীনতা দেবার অঙ্গীকার করে ।
1989 খ্রিঃ 15 ই আগস্ট ভারত দেশভাগের মুল্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে । সেই বছরেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য গান্ধীজির । নােয়াখালি সফর ভারত ইতিহাসের এক উল্লেখযােগ্য ঘটনা । পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে একদিন আগে 14 ই আগস্ট 1989 ।
1948 খ্রিঃ 30 শে জানুয়ারী দিল্লিতে এক প্রার্থনা সভা গান্ধীজি এক আততায়ীর হাতে নিহত হন ।
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও বিশ্ববিখ্যাত মনীষী জর্জ বার্নার্ড গান্ধীজীর এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে শােক প্রকাশ করে মন্তব্য । করেন— “ খুব ভালাে মানুষ হওয়াটাও একটা বিপজ্জনক ব্যাপার । ”
গান্ধীজির জীবন দর্শন ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার উল্লেখযােগ্য অবদানের জন্য মহাত্মা গান্ধী জাতির জনক রূপে স্বীকৃতি লাভ করেছেন ।
শেষ কথা
গান্ধীজী একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তাঁর জীবনকালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে গেছেন।
অসত্য ও হিংসার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তার প্রধান দুটি হাতিয়ার ছিল সত্য ও অহিংসা।
আমরা এখনো তার সিদ্ধান্ত ও তাকে অনুসরন করে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারি এবং গান্ধীজীর স্বপ্নের ভারত বর্ষ তৈরি করতে পারি।