আজ ১৪ মার্চ, বিশ্ব পাই দিবস:
- পাইয়ের পরিচয়টাই আগে দিই। পাই একটা গাণিতিক ধ্রুবক। আমরা তো সবাই বৃত্ত চিনি। একটা বৃত্তের কোনো একটা বিন্দু থেকে হাঁটা শুরু করে পুরো বৃত্তটা ঘুরে যদি আবার আগের বিন্দুতে পৌঁছানো যায়, তাহলে যতটুকু পথ হাঁটা হবে, সেই দূরত্বকে বলে বৃত্তের পরিধি।
- আর আমরা যদি বৃত্তের ওপরের একটা বিন্দু থেকে শুরু করে কেন্দ্র বরাবর সোজাসুজি হাঁটতে শুরু করি, আর তারপর কেন্দ্র পার হয়ে উল্টো পাশের বিন্দুটা পর্যন্ত হাঁটি, যত দূর হাঁটা হবে, সেই দূরত্বকে বলে বৃত্তের ব্যাস।
- এবার একটা ব্যাপার ভাবা যাক। আমরা যদি একটা বৃত্তকে চারপাশ থেকে টেনে বড় করে আগের দুই গুণ বানিয়ে ফেলি, তাহলে এর পরিধি যেমন দুই গুণ হয়ে যাবে, ব্যাসও দুই গুণ হয়ে যাবে। আবার চেপেচুপে অর্ধেক বানালে, পরিধি আর ব্যাস দুটোই অর্ধেক হয়ে যাবে। এদের ভাগফল কিন্তু একই থাকবে। একটা বৃত্ত যত বড় বা যত ছোটই হোক না কেন, এর পরিধিকে ব্যাস দিয়ে ভাগ করলে সব সময় একই সংখ্যা পাওয়া যায়। সেই সংখ্যাটাকেই বলা হয় পাই।
- পাই দিবস গাণিতিক ধ্রুবক পাই (π) -এর সম্মান উদযাপনের দিন। পাই-এর মান প্রায় ৩.১৪ বলে বছরের ৩ নম্বর মাসের ১৪ নম্বর দিনটিকে অর্থাৎ মার্চ মাসের ১৪ তারিখকে পাই দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ১৪ মার্চের দুপুর ১টা ৫৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ডকে পাই সেকেন্ড বলা হয়। পাইয়ের মানের (৩.১৪১৫৯২৬) কাছাকাছি সময়ে দিবসটি উদযাপন করার জন্য পাই দিবসে পাই সেকেন্ড পালন করা হয়। ১৯৮৮ সালে সালে প্রথমবারের মতো পাই দিবস পালিত হয় আমরিকার স্যান
ফ্রানসিস্কো-এর একটি বিজ্ঞান জাদুঘরে। ঐ জাদুঘরের কর্মকর্তা পদার্থবিদ ল্যারিশ এই দিবস উদযাপনের উদ্যোক্তা বলে তাকে পাই এর রাজপুত্র বলা হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে ১২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৪ মার্চকে জাতীয় পাই দিবস হিসেবে পালনের অনুমোদন দেয়। পাই (π) একটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক ধ্রুবক। ইউক্লিডীয় সমতলীয় জ্যামিতিতে, বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতকে পাই (π) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। উইলিয়াম জোনস সর্বপ্রথম ১৭০৬ সালে পাই (π) প্রতীকটির প্রচলন করেন। তবে এই প্রতীকটিকে জনপ্রিয় করেন সুইস গণিতবিদ লিওনার্দো ইউলার। গণিত, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যার অনেক সূত্রে পাইয়ের ব্যবহার দেখা যায়। বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যে π এর মান দশমিকের পর ১ ট্রিলিয়ন পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়েছে।
কোথায় এটা কাজ করে:
- যদিও পাই একটি সাধারণ ধ্রুবক হিসাবে শুরু হয়েছিল, এটি পরে দেখা গেল যে পাই অপ্রত্যাশিতভাবে সর্বত্র পপ আপ হয়ে উঠছে। বৃত্ত-উপবৃত্তের ক্ষেত্রফল, অসীম সিরিজের যোগফল, পরিসংখ্যানের স্বাভাবিক বণ্টন, পদার্থবিদ্যার তরঙ্গ সমীকরণ, অনিশ্চয়তার নীতি, রসায়ন, প্রকৌশল বা অয়লারের অসীম সুন্দর অপরিবর্তনীয় (eiπ+1=0), যেখানে পাই নেই! এই সমস্ত কারণে পাই সর্বদা গণিতবিদদের জন্য একটি বড় আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে। তাই দিনটি পালিত হবে এমন ভাবনা খুব বেশিদিন আগের নয়।
১৪ মার্চ কেন পাই দিবস:
- যুক্তরাষ্ট্রে তারিখ লেখার সময় আগে মাস লেখে, তারপর দিন। আগেই বলেছি, পাইয়ের মান হলো ৩.১৪১৫৯…। এর থেকে প্রথম তিন অঙ্ক নিলে পাওয়া যাবে ৩.১৪। এটাকে মার্কিনদের মতো করে ভাবা যায় মার্চের ১৪ তারিখ। ১৯৮৮ সালে মার্কিন পদার্থবিদ ল্যারিশ প্রথমবারের মতো পাই দিবস আয়োজন করলেন সানফ্রান্সিসকো শহরে। সেখানে একটা রংচঙা প্যারেড হলো, আর প্যারেড শেষে সবাই মিলে ‘পাই’ নামের মিষ্টান্ন খেল। এরপর ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীর গণিতপ্রেমী মানুষদের ভেতরে একটি জনপ্রিয় দিবস হয়ে উঠল এই পাই দিবস। অঙ্কের কোনো একটা ব্যাপার নিয়েও যে একটা দিবস হতে পারে, উৎসব হতে পারে, এটাই তো দারুণ। গণিত তখন বইয়ের পাতা থেকে এসে আমাদের আনন্দময় সংস্কৃতির অংশ হয়ে যায়। এই দিনে কেউ পাই মিছিল বের করে, কেউ ‘পাই’ খায়, কেউ গণিত নিয়ে গান বাঁধে, স্কুলে শিক্ষকেরা বাচ্চাদের সঙ্গে অঙ্ক আর সংখ্যা নিয়ে খেলেন, পাইয়ের গল্প শোনান, পোশাকের দোকানে অঙ্কের নকশাওয়ালা জামা বিক্রি হয়, পাইয়ের মান মুখস্থ বলার প্রতিযোগিতাও হয় কোথাও।
- অঙ্ক নিয়ে মাতামাতি, সংখ্যার প্রতি মোহ—এসব আপাতদৃষ্টে অর্থহীন মনে হতে পারে। কিন্তু এ থেকে যে ভালোবাসা আর একাগ্রতার জন্ম হয়, সেটার ফল সুদূরপ্রসারী। পাই দিবস সংখ্যার প্রতি ভালোবাসা উদ্যাপনের দিন, আর তাই সংখ্যাপ্রেমী মানুষের কাছে বিশেষ আনন্দের দিন! আর এ দিনটিতেই আমাদের প্রিয় বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিন, তাই আনন্দের মাত্রাটাও দ্বিগুণ।